সুশান্তের চিকিৎসা নিয়ে সবই জানত রাজপুত পরিবার!
সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যু মামলায় এখন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চ্যাট নিত্যদিন নানা রহস্যের উদ্ঘাটন করছে, আবার জন্মও দিচ্ছে। সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর পরিবার দাবি করে আসছিল যে, ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে পরিবারকে কিছু জানানো হয়নি। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে। এবার সুশান্তের সঙ্গে তাঁর দিদি প্রিয়াঙ্কা সিংয়ের একটি চ্যাট সামনে এসেছে। অভিনেতার মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে ৮ জুনের ওই হোয়াটসঅ্যাপে প্রিয়াঙ্কা-সুশান্ত কথা হয় অভিনেতার শারীরিক অবস্থা নিয়ে। সেই কথোপকথন এইরকম—
প্রিয়াঙ্কা সিং: প্রথমে একসপ্তাহ লিব্রিয়াম খাও। তারপর ব্রেকফাস্টের পর প্রতিদিন ১০ এমজি করে নেক্সিটো খাও। অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হলে লোনাজেপ নাও।
সুশান্ত: ঠিক আছে সোনুদি। কিন্তু ওই ওষুধ তো কেউ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেবে না।
প্রিয়াঙ্কা সিং: দেখি আমি যদি কিছু করতে পারি। বাবু আমাকে কল কর। আমার এক বন্ধু এখানে আছে। সে একজন নামজাদা চিকিৎসক। সেই তোমাকে মুম্বইয়ের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে। চিন্তা কোরো না।
প্রিয়াঙ্কা তারপরের এটি মেসেজে সুশান্তকে প্রেসক্রিপশন পাঠান। উত্তরে সুশান্ত ধন্যবাদ জানান।
এই মেসেজ চ্যাট থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সুশান্তের দিদি প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে যখন তাঁর ওষুধ নিয়ে এত কথা হয়েছে, তখন তা সুশান্তের বাবা-মাও জানতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথম দিন থেকে তাঁরা দাবি করে এসেছেন যে, সুশান্তের চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে এই মামলার মূল অভিযুক্ত রিয়ার কেক হাতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১২ জুন ওই ছবি পোস্ট করেছিলেন অভিনেত্রী। নেটিজেনদের অভিযোগ, ছবিটি সুশান্তের ফ্ল্যাটেই তোলা। কাজেই ৮ জুনের পর সুশান্তের সঙ্গে দেখা হয়নি বলে রিয়া যে দাবি করে আসছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া রিয়ার সিবিআইকে দেওয়া বয়ান ঘিরেও নানা চাপানউতোর সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আগে দাবি করেছিলেন যে, সুশান্তের ব্যাংকক ট্রিপ ছিল তাঁর বন্ধুদের নিয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করেন। কিন্তু সুশান্তের সেই সফরের সঙ্গী সাবির আহমেদ সিবিআইকে জানিয়েছেন, ওই সফর ছিল অভিনেত্রী সারা আলি খানের জন্য। সুশান্ত এবং সারা সময় কাটাতে চেয়েছিলেন বলেই ব্যাংকক গিয়েছিলেন। তবে যাতে তাঁদের এই সম্পর্ক প্রকাশ না পায়, সেজন্য ব্যক্তিগত চার্টার্ড উড়ান ভাড়া করে তাঁরা ব্যাংকক যান।
এদিকে সিবিআইকে রিয়ার বিরুদ্ধেও বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিথানি। তিনি জানান, সুশান্তের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে রিয়া প্রচুর কেনাকাটা করতেন। সুশান্তের টাকা খরচ করতেন। প্রসঙ্গত, সুশান্তের পরিবার প্রথম দিন থেকেই এই দাবি করে আসছিল। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনেই সিদ্ধার্থ এই তথ্য তদন্তকারী অফিসারদের দিয়েছিলেন। তারপরই রিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এবং কোথায় কোথায় তিনি সেই টাকা খরচ করেছেন সেই বিষয়টিতে তদন্তকারীরা জোর দেন। যদিও এই অভিযোগ তোলায় এবার সুশান্তের পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিয়া। তাঁর আইনজীবী সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এদিকে, এদিন রিয়ার বাবা-মাকে ৮ ঘণ্টা জেরা করেছে সিবিআই।
এদিকে মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের জন্য হোটেল ব্যবসায়ী গৌরব আর্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সোমবার তাঁকে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তারপর এদিন ফের কেন্দ্রীয় অফিসাররা গৌরবকে ডেকে পাঠান। সুশান্ত মামলায় মাদক পাচার চক্রের সূত্র ধরেই গৌরবের নাম উঠে এসেছে। সূত্রের খবর, নারকোটিকসের নজরে রয়েছেন এক অভিনেতা, এক পরিচালক ও দুই রাজনীতিবিদ। এদিন সুশান্ত মৃত্যুর তদন্তে নেমে এক সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে নারকোটিক্স ব্যুরো। তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের অভিজাত পার্টিতে মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
আবার সুশান্ত মামলা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে। সুশান্তের বন্ধু হিসেবে দাবি জানানো প্রযোজক সন্দীপ সিংয়ের সঙ্গে বিজেপির যোগ নিয়ে মুখ খুলেছে কংগ্রেস। সন্দীপের সঙ্গে অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত এবং বোন রঙ্গোলির এক ছবি ভাইরাল হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’-এর দাবি তোলা কঙ্গনাও রাজনীতির খেলারই কোনও ঘুঁটি হতে পারেন।