এবার পুজোয় সাঁওতালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে যাদবপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আমাদেরই দেশের কোনও এক কোণে, কোনও এক জনপদের মাঝে নীরবে লালিত হওয়া শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিকতার আলোকমালায় আলোকিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই ৫১ তম বর্ষে যাদবপুর অ্যাথলেটিক ক্লাবে এবারের পুজোর ভাবনা ‘নতুনের মাঝে পুরাতন শিল্প থাকুক চিরন্তন।’
‘চাদর বাদর’ বা ‘চাদর বাঁধানি’ আদিবাসি সাঁওতাল পুতুলের খুবই বিরল একটি রূপ এবং সাঁওতাল সংস্কৃতির একটি উজ্বল প্রতীক। পুতুল খেলা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশে লোকসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে এবং লোকশিক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ইতিহাস প্রায় কয়েক হাজার বছরের। এই মৃতপ্রায় শিল্পধারাটি একদা পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, অসম ও ওড়িশায় বসবাসকারী সাঁওতাল জনজাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল। বর্তমানে চাদর বদরের এই পুতুল ও তার শিল্পীদের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় এবং ঝাড়খণ্ডের দুমকা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে পাওয়া যায়। এই শিল্পধারাটি ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হল সাঁওতাল জনজাতির স্বল্পসংখ্যক সদস্য পুতুল তৈরির মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং নিজেদের জীবনধারার সঙ্গে তা যুক্ত করেছে। ফলে প্রাচীন এক বহমান ধারা ক্রমশঃ স্তব্ধ হয়ে যেতে বসেছে।
চাদর বদরের ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালিদের গ্রামে গিয়ে, নিজেদের চোখে সবটা দেখে এবং অনুভব করে তবেই শিল্পী নিজের ভাবনায় তা ফুটিয়ে তুলছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই চাদর বদর একটি কাঠের বাক্সের ভিতরে ঝোলানো কাঠের পুতুলের সাহায্যে করা হয়। পর্দা দিয়ে তিন বা চার দিক খোলা থাকে। অভিনেতা প্রাচীন সাঁওতাল সংস্কৃতি অনুযায়ী নানা ধ্বনি এবং শ্লোক উচ্চারণ করে পুতুলগুলি দেখিয়ে নানা জনজাতীয় বাদ্যযন্ত্রের বাজনার তালে তালে গল্প বর্ণনা করেন। পুতুলগুলিতে সংযুক্ত থাকে স্ট্রিং। সেই স্ট্রিং ব্যবহার করে পুতুলগুলি অভিনয়কারী দ্বারা চালিত হয়। পুজোর কয়েকটি দিন মণ্ডপে এই চাদর বদর প্রদর্শিত হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।