বাংলায় কমছে সংক্রমণের হার
রাজ্যে শিখর ছুঁয়ে ফেলেছে করোনা সংক্রমণ। আর এবার শুরু হয়েছে অবনমন। অর্থাৎ, গ্রাফ নামছে। ধীরে হলেও। করোনা পরীক্ষা এক মাসে আড়াই গুণ বৃদ্ধির পরও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে তিন হাজারের গণ্ডিতেই। যা প্রমাণ করছে, সংক্রমণের হার নিম্নগামী। কোভিড টেস্টের তুলনায় নতুন আক্রান্তের (পজিটিভ কেস) হার গত ২৫ দিনে ধরেই নামছে। পাশাপাশি আগস্ট মাস থেকে টানা বেড়ে চলেছে সুস্থতার হার। বুধবার যা পৌঁছে গিয়েছে ৮৬.৬৯ শতাংশে। প্রতিদিন সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যাও থাকছে তিন হাজারের কাছাকাছি। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, রাজ্যে মহামারীর প্রকোপ আপাতত পড়তির দিকে। আর তাই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনই আত্মতুষ্টির সময় নয়। মেট্রো চালু হয়েছে। অন্যান্য ব্যস্ত জায়গাও খুলবে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই পারে। যে ব্যাপারে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছেন প্রত্যেককে।
রাজ্যওয়াড়ি হিসেব দেখলে বোঝা যায়, বাংলায় সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছিল আগস্ট মাসের ৫-৬ তারিখ থেকে। শিখরে পৌঁছেছিল আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে, ২১ আগস্ট। ততদিনে করোনা পরীক্ষার সংখ্যাটা ৩৬ হাজার পেরিয়েছে। টেস্ট অনুপাতে পজিটিভ কেসের হার ছিল ৮.৯ শতাংশ। ওই দিন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩,২৪৫ জন। সুস্থতার হার ছিল ৭৬.৯৬ শতাংশ। তার ২৫ দিন পর স্বাস্থ্যদপ্তরের আজকের বুলেটিন বলছে, এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৩,২৩৭ জন। কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে প্রায় ৪৬ হাজারের। অর্থাৎ ১০ হাজার বেশি। তাও টেস্ট অনুপাতে পজিটিভ কেসের হার নেমে এসেছে ৮.১৪ শতাংশে। সুস্থতার হার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার মতে, ‘সামগ্রিকভাবে কলকাতা ও হাওড়ার অবস্থা এখন অনেক ভালো। জেলাতে কিছু জায়গায় সংক্রমণ বাড়ছে। গোটা পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি।’
কেন্দ্রের পরিসংখ্যানও বলছে, সারা দেশে যে ১০টি রাজ্য সংক্রমণের শীর্ষে (মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা), তার মধ্যে সুস্থতার হারে তিন নম্বরে রয়েছে বাংলা। রাজ্য সরকারের হিসেবে গত দু’মাস ধরেই সুস্থতার হার আশাব্যঞ্জক। জুলাইয়ের শেষদিকে এই অনুপাত কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি। আগস্টের শুরুতে ৭০ শতাংশে পৌঁছে যায় সুস্থতার হার। সেই থেকে তা বেড়েই চলেছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ৮০ শতাংশে পৌঁছয় এই পরিসংখ্যান। পরিস্থিতি যা, তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ৯০ শতাংশে চলে যাবে সুস্থ রোগীর অনুপাত। মৃত্যুর সংখ্যাও আপাতত স্থিতিশীল।
আগস্টের শুরুতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ছিল হাওড়াতে। সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার। গত দেড় মাসে সেখানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কলকাতা পুরসভার হিসেবও বলছে, আগস্টের তুলনায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শহরে পজিটিভ কেসের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ১০,৫০০ জনের আরটিপিসিআর টেস্ট করেছে পুরসভা। যার মধ্যে পজিটিভ মাত্র ৯৭২ জন। ১০ শতাংশও নয়। চলতি মাসের প্রথম ছ’দিনে কলকাতায় টেস্ট হয়েছে প্রায় ১,৮০০ জনের। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ ৯৮ জন, অর্থাৎ ৫.৫ শতাংশ। অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ কেস কমার হার ১০ শতাংশের আশপাশে। দিন যত যাচ্ছে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে, টার্গেট অনুযায়ী সংক্রমণের হার কমানো যায়নি, দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের। এই প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘সংক্রমণ এখনও আশানুরূপভাবে কমানো যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি। মানুষ সহযোগিতা করলে এটাও দৃষ্টান্তমূলকভাবে কমিয়ে ফেলা যাবে।’
নিয়ম করে নজরদারি চালানো, মানুষের মন থেকে আতঙ্কের অবসান এবং কো মরবিডিটি বা অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের পরিচর্যা—এই তিন মন্ত্রেই জয় আসছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কলকাতা পুর এলাকায় যা সফলভাবে করা গিয়েছে। যে কারণে এখানে কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যাও নেমে এসেছে মাত্র একটিতে। নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলি নিয়ে উদ্বেগ অবশ্য থাকছে। তবে সেক্ষেত্রেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি বলেই মত স্বাস্থ্যদপ্তরের। তবে, কলকাতায় মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ায় একটা চিন্তা রয়েছেই। অন্তত এক সপ্তাহ পার হলেই মেট্রো থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছে কি না, তা বোঝা যাবে।