Israel-Iran conflict: সাদ্দাম, গদ্দাফির মতো পরিণতিই অপেক্ষা করছে আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-র জন্য?
আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের মৃত্যুতেই ঠান্ডা হবে মধ্যপ্রাচ্যের মাটি? গোটা ঘটনার আড়ালে কি মার্কিন পাওয়ার সেন্টারের অঙ্গুলিহেলন?
লিখেছেন সৌভিক রাজ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:২৬: মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর মৃত্যুতে এই যুদ্ধ থামবে। কৌশলী ভূমিকা পালন করছে মার্কিন মুলুক। তবে কি আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের মৃত্যুতেই ঠান্ডা হবে মধ্যপ্রাচ্যের মাটি? গোটা ঘটনার আড়ালে কি মার্কিন পাওয়ার সেন্টারের অঙ্গুলিহেলন?
অতীতেও একাধিকা রাষ্ট্রের যুদ্ধে দাদাগিরি ফলিয়েছে আমেরিকা। ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির কৃতিত্ব কার্যত ছিনিয়ে নিয়েছে ট্রাম্প। কেবল দাদাগিরি নয়, বিভিন্ন দেশের না-পসন্দ রাষ্ট্রপ্রধানদের কার্যত দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে হোয়াট হাউস। তবে কি সাদ্দাম, গদ্দাফির মতো পরিণতিই অপেক্ষা করছে আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-র জন্য?
সাদ্দাম হোসেন (ইরাক, ২০০৬):

সাদ্দাম হোসেন (Saddam Hussein) প্রায় চার দশক যাবৎ ইরাক শাসন করেছিলেন। ৯/১১-র পরবর্তী সময়ে কোনও অজ্ঞাত কারণে সাদ্দামকেই মার্কিন সেনাবাহিনীর থেকে প্রাণ বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। মাটির তলার বাঙ্কার থেকে সাদ্দামকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছিল মার্কিন সেনারা। সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করার পর মার্কিন আদালতে তাঁর বিচার হয়। বিচারে তাঁর সাজা হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাঁকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
মুয়াম্মার গদ্দাফি (লিবিয়া, ২০১১):

লিবিয়ার নেতা ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি (Muammar Gaddafi)। আরব দুনিয়ায় গদ্দাফি ছিলেন জনপ্রিয়।
রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ১৯৬৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার মসনদে বসেন তিনি। ফেডারেশন অব আরব রিপাবলিকস গঠনের মাধ্যমে আরব দেশগুলোকে ঐক্য গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। গাদ্দাফি সব সময়ই ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী দেশগুলোর রোষে পড়েন তিনি। এরপরই শুরু হয় লড়াই। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর সির্তে শহর থেকে পালানোর সময় তিনি নিহত হয়েছিলেন। বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলেছিল গোটা শহর। পাশাপাশি বিমান থেকে অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছিল ওই দিন।
মহম্মদ মোসাদ্দেক (ইরান, ১৯৫৩):

মোসাদ্দেক ইরানের তেলের খনি জাতীয়করণ করেন, তাতে ব্রিটেন ও আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগে। ব্রিটিশ এমআই৬-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিআইএ ‘অপারেশন এজ্যাক্স’ পরিচালনা করে। তারা ঘুষ দিয়ে সেনাবাহিনীর একাংশকে পাশে পায়, সংবাদ মাধ্যম ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যবহার করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ উস্কে দেয়। তারপর সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোসাদ্দেককে সরানো হয়। তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় এবং পশ্চিমপন্থী শাহকে আবার ক্ষমতায় বসানো হয়। বলা হয়, মোসাদ্দেককে সরানোয় ইরানে ইসলামী বিপ্লব এবং খোমেইনির ক্ষমতা দখলের রাস্তা প্রশস্ত হয়েছিল।
জেকোবো আরবেনজ (গুয়াতেমালা, ১৯৫৪):

আরবেনজ কৃষির আমুল সংস্কার করেছিলেন, যার ফলে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির জমি বাজেয়াপ্ত হয়। স্বার্থ রক্ষা করতে সিআইএ ‘অপারেশন সাকসেস’ চালায়। সিআইএ বিদ্রোহী নেতা কার্লোস কাস্তিয়ো আরমাস এবং তাঁর বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়। বিমান হামলা ও গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জনমানসে ভয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। চাপে পড়ে আরবেনজ পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এরপর সামরিক শাসন শুরু হয়, যা বহু বছরের গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।
ম্যানুয়েল নোরিয়েগা (পানামা, ১৯৮৯):

নোরিয়েগা, একদা ছিলেন সিআইএ-র সদস্য, কিন্তু মাদক পাচার, দমননীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে তাঁকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন ‘জাস্ট কজ’ শুরু করে। ২৭,০০০ মার্কিন সেনা পানামায় ঢুকে পড়ে বোমাবর্ষণ করে। নোরিয়েগা ভ্যাটিকান দূতাবাসে আত্মগোপন করেন, পরে আত্মসমর্পণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে মাদক ও অর্থপাচারের অভিযোগে নোরিয়েগাকে (Manuel Antonio Noriega) কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ট্রাম্পের কাছে যখন আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের হত্যার প্রস্তাব দেয় ইজরায়েল, তখন তিনি নাকি প্রস্তাবে রাজি হননি। তবে কি আর কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের রক্ত নিজেদের হাত রাঙাতে চাইছে না আমেরিকা? নাকি আড়ালে থেকে হত্যালীলাকে সমর্থন করবে হোয়াট হাউস?