দীপাবলির পরেই সিদ্ধান্ত রাজ্য পুরভোটের
কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য পুরসভার ভোট কবে করানো হবে, সে বিষয়ে পুজোর পরই সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনকে তলব করে এ বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সোমবার (৫ অক্টোবর) জানিয়েছে, রাজ্যে করোনা সংক্রমণ যথেষ্ট বেড়েছে। তাই এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। দীপাপলির পরেই পরিস্থিতি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডকে বৈধ বলে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর, তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দাখিল হয়। সেই মামলায় গত শুনানিতেই দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে রাজ্যে ভোট করার মতো বর্তমানে পরিস্থিতি আছে কি না, তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল।
গত মে মাসে কলকাতা পুরসভার পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিনই রাজ্য সরকার ফিরহাদ হাকিমকে চেয়ারম্যান করে গোটা পুরবোর্ডকেই প্রশাসকমণ্ডলী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার পরেই সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে, কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা হয়।
সেই মামলায় কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীকে ‘কেয়ারটেকার বোর্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে, কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেন হাইকোর্টেক বিচারপতি সুব্রত তালুকদার। তিনি জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শহরে কাজ যাতে আটকে না যায়, তা মাথায় রেখেই, পুরো প্রশাসক বোর্ডকে ‘কেয়ারটেকার বোর্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলাকারী যদিও কলকাতা হাইকোর্টের এই অন্তর্বর্তী নির্দেশে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি এই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে। উলটে ওই বোর্ডের কাজের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান মামলাকারী শরদ কুমার সিং। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে, ফের মামলা ফিরিয়ে দেয় হাইকোর্টে। সম্প্রতি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চ পুরো প্রশাসক বোর্ডের বৈঠকে স্বীকৃতি দেয়। তবে ডিভিশন বেঞ্চ তার রায়ে দ্রুত নির্বাচন করার পক্ষেও পরামর্শ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করেই মামলাকারী গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসক বোর্ডের বৈধতা সম্পর্কে কোনও শুনানিতে না ঢুকেই, সরাসরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তলব করে।
কলকাতা-সহ রাজ্যের শতাধিক পুরসভার ভোট বকেয়া রয়েছে। শীর্ষ আদালত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এদিন জানতে চেয়েছিল, কলকাতা ও অন্যান্য পুরসভার ভোট কবে করানো সম্ভব? সম্প্রতি বিজেপিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দ্রুত ভোট করানোর দাবি তুলেছে।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউলের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী সোমবার জানান, রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে।
করোনার মধ্যে যদি বিহারে ভোট করানো যায়, তা হলে এ রাজ্যে পুরভোট করতে সমস্যা কোথায়? এ প্রশ্নও ওঠে। কমিশনের আইনজীবীর যুক্তি, বিহারে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হলেও সেখানকার পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের থেকে আলাদা। রাজ্যে একটি বিধানসভা উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তা-ও স্থগিত। কলকাতা পুরসভার আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বিষয়ে বাকিদের কোনও বক্তব্য থাকলে তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। ৮ ডিসেম্বর ফের শুনানি রয়েছে।