জাপানের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সানায়ে তাকাইচি!

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৫০: এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনার পথে জাপান (Japan)। শাসকদল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)–র নেতৃত্বে নির্বাচিত হলেন সানায়ে তাকাইচি (Sanae Takaichi)-যিনি সংসদীয় অনুমোদন পেলে হতে চলেছেন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী (Japan First Female PM)।
জাপানের শাসক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (LDP) নেতৃত্বে শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাটকীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর জয়ী হলেন সানায়ে তাকাইচি। কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর রান-অফ ভোটে তাকাইচি দলের সর্বসম্মত নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।
প্রথম দফার ভোটে তাকাইচি পেয়েছিলেন ১৮৩ ভোট, কোইজুমি পেয়েছিলেন ১৬৪ ভোট। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় দ্বিতীয় দফায় রান-অফ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় ২৯৫ জন সংসদ সদস্য এবং ১০ লক্ষেরও বেশি এলডিপি সদস্য এই নির্বাচনে অংশ নেন। দ্বিতীয় দফায় তাকাইচি বিপুল সমর্থন পেয়ে জয়ী হন।
এই জয়ের ফলে, আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি জাপানের সংসদে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের ভোটে তাকাইচি সমর্থন পেলে তিনি হবেন জাপানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই জয় শুধু একটি রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
সানায়ে তাকাইচি- ৬৪ বছর বয়সী এক দৃঢ়চেতা রাজনীতিক, যিনি জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (LDP) অন্যতম প্রভাবশালী মুখ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলীয় নেতৃত্বে রয়েছেন এবং তাঁর রক্ষণশীল রাজনৈতিক অবস্থান তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে। তিনি জাপানের প্রাক্তন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী। “আবেনোমিক্স” অর্থনৈতিক নীতির একজন দৃঢ় সমর্থক হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
তাকাইচি নিয়মিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে যান, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানি সেনানায়কদের স্মৃতিসৌধ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। রানঅফ ভোটের আগে তিনি বলেন, “মানুষ জানে না এলডিপি কীসের পক্ষে। আমি চেয়েছিলাম তাদের দুশ্চিন্তাকে আশায় রূপান্তর করতে।”
তাঁর শৈশব কেটেছে নারা প্রিফেকচারের সাকুরাই শহরে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া তাকাইচির বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হয়েছেন। কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। রাজনীতিতে আসার আগে তাঁর স্বপ্ন ছিল পপ-সংগীত শিল্পী হওয়ার, যুবক বয়সে গান রেকর্ডও করেছিলেন।
১৯৯৩ সালে তিনি প্রথমবার জাপানের সংসদে নির্বাচিত হন। এরপর অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এলডিপির ডানপন্থী রক্ষণশীল শাখার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পরিচিত। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ কঠোর হলেও তরুণ ও রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়।
তিনি যদি জাপানে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তাঁর সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর চাপ আসতে পারে। জাপানের অর্থনৈতিক সংকট ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সমস্যা মোকাবিলায় তাঁকে নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আনতে হতে পারে। সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতারও পরীক্ষা হবে।