করোনা মোকাবিলায় বাংলার পরিকাঠামোর প্রশংসা এসবিআই রিপোর্টে
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো হোক বা পরিষেবা। করোনাকালীন কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পশ্চিমবঙ্গ। আর এবার হয়তো শেষতম চ্যালেঞ্জ—দুর্গাপূজা। এই উৎসবের সময় রাজ্যবাসী যদি সমস্তরকম বিধিনিষেধ এবং সতর্কতা নিখুঁতভাবে পালন করতে পারে, তাহলে এই যুদ্ধে বাংলা অনেকটাই জয়ী হবে। এই অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দেশের ধনী ও উন্নত অর্থনীতির রাজ্যগুলির তুলনায় আর্থিক নিরিখে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলি ভালো কাজ করেছে।
উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ওড়িশা, কেরল কিংবা পশ্চিমবঙ্গ এই তালিকায় রয়েছে। বলা হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, দিল্লির মতো উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামোর রাজ্যগুলি কিন্তু করোনার মোকাবিলা যথাযোগ্যভাবে করতে ব্যর্থ। তাই দেখা যাচ্ছে, এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের হার লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। একাধিক রাজ্যের নানাবিধ ব্যর্থতার কথা বলা হলেও পশ্চিমবেঙ্গর নাম ব্যর্থতার তালিকায় সেভাবে নেই এই রিপোর্টে। কিন্তু আশঙ্কা ও উদ্বেগ রয়েছে বাংলা সম্পর্কে। স্টেট ব্যাঙ্ক রিসার্চ গ্রুপের তৈরি করোনা সংক্রান্ত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গণেশ চতুর্থীর পর দেখা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রে আবার নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। দক্ষিণে বেড়েছে ওনাম উৎসবের পর। তার আগে কিন্তু ধীরে হলেও এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ কমছিল। এবার সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সংক্রমণ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু অক্টোবর মাসে দুর্গাপূজা আসছে।
স্বাভাবিকভাবে সামাজিক সমাবেশ হবেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রি-ওপেন সংক্রান্ত সর্বশেষ গাইডলাইনে খোলা স্থানে ধর্মীয় সমাবেশে এখন আর ১০০ জনের কোনও সীমাবদ্ধতাও নেই। সুতরাং, বাঙালির সেরা উৎসবে সামাজিক যোগদান কমবেশি হবেই। স্টেট ব্যাঙ্ক রিপোর্টে বলেছে, দুর্গাপূজায় সতর্কতা রক্ষা করাই এখন বঙ্গবাসীর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এই পুজোর সময়ই বাংলায় সংক্রমণ প্রবণতা অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই পুজোয় যদি সতর্কতা রক্ষার পরীক্ষায় বাঙালি উত্তীর্ণ হয় এবং করোনার সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে একটা বড়সড় লড়াইয়ে জয় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৬ সেপ্টেম্বর ভারতে করোনার সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ শিখর স্পর্শ করেছিল। অর্থাৎ, তারপর থেকে কমছে সক্রিয় সংক্রমণ হার। সেই সময় রিকভারি রেট তথা সুস্থ হওয়ার হার ছিল ৭৮ শতাংশ। রিসার্চে দেখা গিয়েছে, ভারতে ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যেই করোনার সংক্রমণ সর্বোচ্চ। কারণ এই বয়সের মানুষই বিভিন্ন কারণে সবথেকে বেশি বাড়ির বাইরে যান।
স্টেট ব্যাঙ্ক রিসার্চ গ্রুপ তাদের সমীক্ষায় সাতদিনের গড় হিসেব লক্ষ করেছে। দেখা গিয়েছে, ২০টি প্রধান রাজ্যের মধ্যে সাতদিনের গড় সংক্রমণ বৃদ্ধির শীর্ষে যে রাজ্যগুলি রয়েছে, সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ নেই। যদিও বাংলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এখনও এই রাজ্যে সংক্রমণ শীর্ষ বিন্দু স্পর্শ করেনি। সাধারণত সংক্রমণ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু পর্যন্ত পৌঁছনোর পর যখন লাগাতার কমতে থাকে, তখনই শিখর ছোঁয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হয়। এখনও শিখর স্পর্শ না করার তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, রাজস্থান। সুতরাং, সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় সাবধান!