প্রাথমিকে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক বদলি, কী কারণে এই পদক্ষেপ? জানাল শিক্ষা দপ্তর

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৫৬: রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বড়সড় রদবদল ঘটাতে চলেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। শুক্রবার জারি করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত মোট ২৩,১৪৫ জন শিক্ষককে বদলি করা হবে। এই বদলি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে স্পষ্ট করেছে দপ্তর।
শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভারসাম্য রক্ষা করা। বহু স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম, আবার কোথাও অতিরিক্ত। ফলে পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটছে। এই সমস্যা দূর করতেই বদলির সিদ্ধান্ত।
সেপ্টেম্বর মাসে সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’-র তথ্য অনুযায়ী, একদিকে বহু স্কুলে শিক্ষক উদ্বৃত্ত, অন্যদিকে বহু স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি প্রকট। উদ্বৃত্ত শিক্ষকের সংখ্যা যেখানে ২৩,১৪৫ জন, ঘাটতির পরিমাণ ২৩,৯৬২ জন। এই বিপরীত চিত্রই প্রশাসনকে ‘Rationalization’ বা পুনর্বিন্যাসের পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে।
শিক্ষা দপ্তর (Education Department) জানিয়েছে, বদলি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে দপ্তরের তত্ত্বাবধানে হবে, যাতে কোথাও বিশৃঙ্খলা না ঘটে। বদলির সময় শিক্ষক-পরিবারের সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষামহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাংশ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক সংগঠন এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এতে শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে এবং ছাত্রদের পঠনপাঠন আরও সুষম হবে।
তবে অন্যদিকে, বহু শিক্ষক ও অভিভাবক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন-একই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে পড়িয়ে যাঁদের শিকড় গজিয়েছে, তাঁদের হঠাৎ বদলি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
শহর ও শহরতলির বহু প্রাথমিক স্কুলে দেখা যায়, ছাত্রসংখ্যা কম অথচ শিক্ষক রয়েছেন পাঁচ-ছ’জন। সেখানে পঠনপাঠনের চেয়ে সময়মতো স্কুলে উপস্থিতি বজায় রাখাই যেন প্রধান কাজ। বিপরীতে, গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট-কোথাও একজন, কোথাও দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনওরকমে চলছে পাঠদান। এই বৈষম্য দূর করতেই শিক্ষা দপ্ত র আগেই ‘থ্রি টিচার পলিসি’ গ্রহণ করেছে। এর লক্ষ্য প্রত্যেক প্রাথমিক স্কুলে অন্তত তিনজন শিক্ষক রাখা। সেই নীতির বাস্তবায়নেই এবার শহরের উদ্বৃত্ত শিক্ষককে গ্রামীণ স্কুলে পাঠানো হচ্ছে।