দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

১৭ ইঞ্চির দাঁ বাড়ির কামান আজও গর্জে ওঠে সন্ধিপুজোয়

October 21, 2020 | 2 min read

ইতিহাস প্রসিদ্ধ জোড়াসাঁকো। সে কালের এক অভিজাত, বনেদি অঞ্চল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে এখানে বসতি স্থাপন করেছিল ঠাকুর, মল্লিক, রায়, দাঁ প্রমুখ পরিবার। অতীতের বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট নাম বদলে এখন বিবেকানন্দ রোড। গণেশ টকিজের মোড়ের অদূরে যে বাড়িটি স্থাপত্য বৈচিত্রে সকলের নজর কাড়ে, কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর তালিকায় সে একেবারে ‘মাস্ট সি’ গোত্রের।

বন্দুকের ব্যবসা ছিল পরিবারের। জোড়াসাঁকো নরসিংহচন্দ্র দাঁয়ের পরিবারের পুজো তাই ‘বন্দুকওয়ালা বাড়ি’র পুজো নামেই পরিচিত। বাঁকুড়ার কোতলপুর থেকে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় এসেছিলেন এই পরিবারের আদি পুরুষ। তাঁরই উত্তরপুরুষ নরসিংহচন্দ্র দাঁ ১৮৩৫ সাল নাগাদ শুরু করেন বন্দুকের ব্যবসা। ওল্ড চিনেবাজার স্ট্রিটে ‘নরসিংহচন্দ্র দাঁ অ্যান্ড কোং গান অ্যান্ড রাইফেল মেকার্স’ নামে সেই দোকানেই ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করে তিনি প্রভূত ধনশালী হয়ে ওঠেন। এর পরেই ১৮৫৯ সালে শুরু করেন দুর্গোৎসব।

বাড়িটি দেখে অনুমান করা যায় যে, দালান ও উঠোনের কিছু অংশ পরবর্তী কালে ঠাকুরদালানে রূপান্তরিত হয়েছে। লোহার থামযুক্ত কারুকাজ করা তিনটি খিলান বাড়ির উঠোন থেকে ঠাকুরদালানকে আলাদা করেছে। লোহার ঢালাই করা সেই খিলানের কাজ আজও শিল্পরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ডাকের সাজের প্রতিমাকে সাজানো হয় সোনার গয়নায়। রথের দিন হয় কাঠামোপুজো। প্রতিপদের দিন থেকে পুজো শুরু। ষষ্ঠীর দিনে হয় বোধন। সন্ধিপুজোয় নৈবেদ্য হয় এক মণ চালের, যা সাজান বাড়ির ছেলেরা। ভোগের মিষ্টি- পান্তুয়া, গজা, মিহিদানা ইত্যাদি বাড়িতেই তৈরি হয়। এ ছাড়াও ভোগে থাকে লুচি।

সন্ধিপুজোয় আজও গর্জে ওঠে কামান। দাগা হয় বন্দুক। মাত্র ১৭ ইঞ্চি লম্বা এই কামানটি সে কালে তৈরি করেছিল ‘উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস’ কোম্পানি। আকারে এতটুকু হলেও তার সব কিছুই আসল কামানের মতো।

নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো। তবে পরিবারের রীতি অনুসারে বাড়ির অন্য কুমারীদেরও মণ্ডপে সাজিয়ে বসানো হয়। পরিবারের সদস্যরা তাদের হাতে তুলে দেন নানা ধরনের উপহার। সপ্তমীর সকালে রুপোর ছাতা মাথায় দিয়ে গঙ্গাস্নানে যায় নবপত্রিকা। দশমীর দিন বাড়ি থেকে যখন প্রতিমা রাস্তায় বার হয়, তখনও বন্দুক দাগা হয়।

আগে দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। তেমনই আগে বাহকের কাঁধে চেপে দু্র্গা প্রতিমা বিসর্জনে যেত। দু’টি নৌকার মাঝখানে রেখে প্রতিমাটি মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে বিসর্জন হত। এখন অবশ্য তা আর হয় না। তবু এই পরিবারের অপরূপ প্রতিমা দেখতে আজও ভিড় করেন বহু মানুষ।

পরিবারের সদস্য আবীর দাঁ জানান, করোনা আবহে এ বছর পুজোটি কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য বারের তুলনায় প্রতিমার উচ্চতাও কমানো হচ্ছে। এমনকি, প্রতিমা বিসর্জনেও এ বছর হাত লাগাবেন বাড়ির লোকেরাই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga Pujo, #Durga Puja 2020

আরো দেখুন