রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আনলক অর্থনীতিতে শীর্ষে বাংলা

October 28, 2020 | 2 min read

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফেরার তাগিদ। আনলক পর্ব বা নিউ নর্মাল, যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় ফেরাটাই এই পর্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই তাগিদে একেবারে শীর্ষেই স্থান করে নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। গুগলের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই সাফল্যের খতিয়ান।

কোন দেশ বা রাজ্য অর্থনৈতিকভাবে কতটা এগল, তা বিচার করার কয়েকটি মাপকাঠি আছে। এদেশের আর্থিক হাল কেমন, তা মাপতে সমীক্ষা চালায় গুগল। যে রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির অবস্থা ভালো, অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহর বেশি, এমন ১২টি রাজ্যকে সামনে রেখেই মূলত ওই সমীক্ষা করা হয়। সেখানেই প্রথম ছ’টি রাজ্যের তালিকায় উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। যে মাপকাঠিগুলির উপর নির্ভর করে সমীক্ষা চালানো হয়, তার মধ্যে প্রথমটি ছিল ‘ওয়ার্কফোর্স মোবিলিটি’। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণের মধ্যেও অফিস-কাছারি বা কাজের জায়গাগুলি স্বাভাবিকভাবে খুলছে কি না, সেখানে কর্মীরা নিয়মিত যাচ্ছেন কি না, গেলেও সময় মতো কাজ করছেন কি না, তার উপর সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ওই সমীক্ষা হয়। গত বছরের একই সময়ের নিরিখে ওই ‘মোবিলিটি’ বৃদ্ধির হার বাংলায় চার শতাংশ।

মজার বিষয়, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি রাজ্যগুলির মধ্যে শুধু তালিমনাড়ু এবং দিল্লিতে মোবিলিটি ‘পজিটিভ’ রয়েছে। এখানে তার হার যথাক্রমে ২.৩ এবং ১.৪ শতাংশ। অর্থাৎ এই দুই রাজ্যের বাইরে দেশের কোথাও সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে পারেননি। গত বছরের নিরিখে বৃদ্ধির হার সর্বত্র ঋণাত্মক। এমনকী ওই ১২টি রাজ্যের বাইরে মাঝারি অর্থনীতির রাজ্যগুলিতে মোবিলিটির হার মাইনাস ৫.২ শতাংশ। ছোট অর্থনীতির রাজ্যগুলিতে তা মাইনাস ৯.৭ শতাংশ। আর দেশে সার্বিকভাবে মোবিলিটির হার মাইনাস ২.১ শতাংশ। শিল্পের বড়াই করা দুই রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে মোবলিটির হার যথাক্রমে মাইনাস ১ শতাংশ এবং মাইনাস ১.৫ শতাংশ।

তবে শুধু মোবিলিটির নিরিখে নিউ নর্মালের চরিত্র বিচার করা যায় না, বলছে সমীক্ষাটি। তারা আরও তিনটি মাপকাঠিকে সামনে রেখেছে। সেগুলি হল জিএসটি আদায়, বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং নতুন গাড়ি কেনা। এই ক্ষেত্রগুলিতে কী অবস্থায় আছে পশ্চিমবঙ্গ? সমীক্ষাটি বলছে, গত বছরের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে এ রাজ্যে সেপ্টেম্বরে জিএসটি আদায় বেড়েছে ৪.২ শতাংশ। বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে ২.৯ শতাংশ। নতুন গাড়ি কেনার প্রবণতা বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ। অন্যন্য রাজ্যগুলির মধ্যে জিএসটি আদায় বৃদ্ধিতে ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যগুলি। এমনকী গুজরাতেও বৃদ্ধির হার পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় খুব একটা এগিয়ে নয়। সেখানে তা ৬.১ শতাংশ। নতুন গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাত, রাজস্থান, কেরল বা দিল্লিকে। এ ক্ষেত্রে তামিলনাড়ুর পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বিদ্যুৎ খরচের নিরিখেও শিল্পনির্ভর বহু রাজ্য গত বছরের তুলনায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সেখানে এ রাজ্যের অবস্থা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।

অপর দিকে দেশের অন্যতম একটি অনলাইন প্রপার্টি কেনাবেচা সংস্থার হিসেব বলছে, অফিস চালানো বা বসবাসের জন্য বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা ও শহরতলির মোট ৪৫টি এলাকার বাড়িভাড়ার বাজারদরের নিরিখে তারা জানাচ্ছে, এখানে বাড়ির চাহিদা ৩৩.৩ শতাংশ বেড়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে। ৩৩.৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া একই আছে। বাকি ক্ষেত্রে তা কমেছে। অথচ মুম্বইতে চাহিদা বৃদ্ধির হার মাত্র ২৯ শতাংশ। চেন্নাইয়ে তা ২৫ শতাংশ। দিল্লিতে অবশ্য চাহিদা বৃদ্ধি এখানকার থেকে বেশি। তা ৪০ শতাংশ।

নিউ নর্মালের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল রেস্তরাঁ। একটি অনলাইন খাবার সাপ্লাই সংস্থার হিসেব, হোম ডেলিভারি প্রায় ৮৫ শতাংশ স্বাভাবিক হলেও, রেস্তরাঁয় বসে খাওয়ার প্রবণতা এখনও বেশ কম। কলকাতা অবশ্য এই পরিসংখ্যানেও শীর্ষে। হিসেব বলছে, এখানে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তরাঁ টেবিল সাজিয়ে রাখছে অতিথিদের জন্য। তারপর রয়েছে হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুর মতো ছোট শহর। বড় শহরগুলি এই তালিকায় একেবারে শেষের দিকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Mamata Banerjee, #Economy

আরো দেখুন