ভোটার তালিকা সংশোধন করা যাবে অনলাইনেও
একুশের ভোট প্রস্তুতিতে প্রথম থেকেই করোনার ছোঁয়াচ এড়াতে উদ্যোগী নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)। সেক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে অনলাইন পরিষেবায়। বুথভিত্তিক ‘অফলাইন’-এর পাশাপাশি ভোটার তালিকায় ত্রুটি সংশোধনের আবেদন করা যাবে অনলাইনেও। এতদিন এনভিএসপি পোর্টালে এই পরিষেবা মিলত। এবার ‘ভোটার পোর্টাল’ (Voter Portal) নামে নতুন আরও একটি পোর্টাল চালু করল কমিশন। বাড়িতে বসেই তালিকায় নাম তোলা, ঠিকানা পরিবর্তন সহ যাবতীয় পরিষেবা মিলবে এই পোর্টালে। বিহার ভোটের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এ রাজ্যে ভোট প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কমিশন। প্রাথমিক পর্বে চলছে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনী (সামারি রিভিশন)-এর কাজ। সেই মতো গতকাল প্রকাশিত হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ মাসে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৭৯ জন ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। নতুন নাম উঠেছে ৩৯ হাজার ১৭৪ জনের। গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৯ লক্ষ। খসড়া তালিকায় সেটা কমে হয়েছে ৭ কোটি ১৮ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩০৮।
ভোটার তালিকায় (Voter List) বিশেষ সংশোধনীর কাজ চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বুথভিত্তিক প্রতি শনি ও রবিবার বসবে শিবির। বুথ লেবেল অফিসার (বিএলও)’রা সংশোধীনর কাজ করবেন। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। সব ঠিক থাকলে এই তালিকাই ভাগ্য নির্ধারক হবে নবান্ন (Nabanna) দখলের লড়াইয়ে। তবে সামারি রিভিশনের পরও ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ নিয়মমতো চলবে। এমনটাই জানা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে। এদিন ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত একটি প্রেস বিবৃতি জারি করেছে দপ্তর। সেখানে বলা হয়েছে, সামারি রিভিশনের মাঝে ভোটার তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন, নামের সংশোধন সহ বিভিন্ন কাজ চলবে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স ১৮ হবে তাঁরাই ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন। তাঁদের পূরণ করতে হবে ছ’নম্বর ফর্ম । সাত নম্বর ফর্মে নাম বাতিলের আবেদন করা যাবে। এবার অনলাইনেও পূরণ করা যাবে ছ’নম্বর ফর্ম। কোভিড আক্রান্তদের পাশাপাশি এই পরিষেবা নিতে পারেন যে কেউ। পুরো প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে সম্পূর্ণ করতে রাজ্যের ২৪টি জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরের শীর্ষ কর্তারা।
সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে বুথ স্তরের অফিসার বা বিএলও’রা (BLO) যাতে নির্দিষ্ট সময় বুথে বসেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এই কাজে নজরদারি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইলেক্ট্রোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও)’দের। আসলে, বিএলও’দের কাজ নিয়ে কোনও অভিযোগ শুনতে চায় না কমিশন। কারণ, ইতিমধ্যেই সর্বদলীয় বৈঠকে এই বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি। অতীতে সব বুথে বুথ লেভেল অফিসাররা নিয়মমতো বসেন না বলে তারা কমিশনে নালিশ ঠুকেছে। বিরোধীদের দাবি, সব বুথে যাতে বিএলও’রা ঠিকমতো কাজ করেন, সেটা দেখা কমিশনের দায়িত্ব। নজরে রাখতে হবে তালিকা থেকে ভুতুড়ে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টিও।
করোনা আবহে (Coronavirus) এবার বিএলও’দের কাজের পরিধি বেড়েছে। ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে তাঁদেরকেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দল কমিশনের কাছে সেই আর্জি রেখেছে। তার উপর মালদা-মুর্শিদাবাদে গঙ্গার আগ্রাসী ভাঙ্গন অব্যাহত। তার জেরে ভোটারদের ঠিকানা প্রতিমুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে। এ ব্যাপারেও বিএলও’দের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। শুধু তাই নয়, নাম বাতিলের উপযুক্ত কারণ জানানোরও জোরালো দাবি উঠেছে সর্বদলীয় বৈঠকে। সেই দাবিও মেনে নিয়েছে কমিশন। সূত্রের খবর, কীসের ভিত্তিতে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে অফিসারদের। সেই সম্পর্কিত তথ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।