নবাবি ইতিহাস এবার লাইট অ্যান্ড সাউন্ডে, উদ্যোগী রাজ্য
নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ। বাংলার এক সময়ের রাজধানী এই শহরের প্রতিটি প্রান্তে ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে। নবাবের আমলে এই শহরের কদর ছিল অন্যরকম। আস্তাবল, সৈন্যদের থাকার জায়গা, নবাবের শৌখিন বাগান সহ আরও অনেক কিছুই ছিল এখানে। এখানকার আস্তাবল ছিল দেখার মতো। এবার সেই আস্তাবলের ইতিহাস তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে মুর্শিদাবাদ পুরসভা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে ঘোড়াদের নিয়ে মহড়া চলত। বিপক্ষ শত্রুদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তা শেখানো হতো। আবার নবাবরা প্রায়ই আস্তাবলে এসে ঘোড়াদের আদর-যত্ন করতেন। সেই সব কাহিনী লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেমের (Light And Sound System) মাধ্যমে তুলে ধরতে চাইছে পুর কর্তৃপক্ষ। তারা ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য পর্যটন দপ্তরে।
মুর্শিদাবাদ পুরসভার (Murshidabad Municipality) চেয়ারম্যান বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, আমাদের শহরে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ পর্যটক আসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশিদেরও আনাগোনা দেখা যায়। তাঁরা ইমামবাড়া, হাজারদুয়ারি, জগৎ শেঠের বাড়ি দেখে ফিরে যান। কিন্তু এর বাইরেও শহরের লুকিয়ে আছে নানা ইতিহাস। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেমে প্রতিটি বিষয় তুলে ধরা হবে। পর্যটন দপ্তরের আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলেই আমরা কাজ শুরু করব। পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ শহরে পর্যটকদের চারচাকা গাড়ি সহ যানবাহন রাখার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সেকারণে পর্যটকদের জন্য আলাদা স্ট্যান্ড তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, শহরের সৌন্দর্য আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। আমাদের আরও বেশকিছু কাজ করতে বাকি রয়েছে। সেগুলি দ্রুত করা হবে। আস্তাবল নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকায় বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে। সেইসময় ঘোড়া স্নান করানোর জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকত। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সেইমতো তারা কাজ করত। এই বিষয়গুলি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে পারলে তা যথেষ্টই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। সেই কারণেই আমরা দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে চাইছি। আশাকরি পর্যটন দপ্তর সবরকমভাবে আমাদের সহযোগিতা করবে। পর্যটকদের থাকার জন্য আমরা অতিথি নিবাস তৈরি করেছি। সেখানে আধুনিকমানের রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব (Gautam Deb) সম্প্রতি বেশ কয়েকবার মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) পরিদর্শনে আসেন। তিনিও এই শহরের বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মুর্শিদাবাদ শহর পুরোটাই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। হাজারদুয়ারির মূল গেটের পাশে লুচি দোকান চালান এক মহিলা। তিনি বলেন, এখন মেরেকেটে ১০০ টাকার বিক্রি হচ্ছে। তাতে সংসার চলে না। স্বামীকে অন্য কাজে যেতে হয়েছে। স্থানীয়রা আরও বলেন, শহর ভালোভাবে সাজিয়ে তুলতে পারলে আগামী দিনে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। তাতে এলাকার বহু বাসিন্দা উপকৃত হবেন।