সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় বুথ কমিটি গড়তে হিমশিম বিজেপি
নদীয়া জেলায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বেশকিছু এলাকায় বুথ কমিটি গড়তে হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি। আগামী বছরেই বিধানসভা ভোট। তার আগে এখনও বিজেপির নদীয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলায় সব জায়গায় বুথ কমিটি গড়তে পারেনি তারা। বিধানসভা ভোটের আগে বুথ শক্তিশালী করতে রাজ্য থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘু এলাকায় তারা ধাক্কা খাচ্ছে।
গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি বিপুল ভোটে জয়ী হয়। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও সেই জয় মূলত সংখ্যালঘু ভোটের জোরে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। তারপর অনেকটাই সময় পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু এখনও অনেক এলাকায় তারা সেভাবে সংগঠন মজবুত করতে পারেনি। নদীয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলায় মোট ২৩৪৭টি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে একশোর কাছাকাছি বুথে এখনও কমিটিই গড়া যায়নি বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া কনভেনর সন্দীপ মজুমদার বলেন, সংখ্যাটা একশো হবে না, তবে এটা ঠিক ৬০-৭০টি মতো বুথে আমাদের কমিটি গড়ার কাজ চলছে। এখনও কমিটি নেই। চাপড়া, তেহট্টের মতো সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় একশো শতাংশ বুথে এখনও কমিটি গড়া যায়নি।
বিজেপি সূত্রের খবর, জেলার দক্ষিণ অংশের তুলনায় উত্তরে মুসলিম প্রধান এলাকা অনেক বেশি। ফলে সেই জায়গায় কমিটি গড়তে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবে জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, স্থানীয় স্তরে তৃণমূল নেতাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে সংখ্যালঘুরা তাদের কাছে আসতে শুরু করেছেন। সন্দীপবাবুর দাবি, অনেক জায়গাতেই সংখ্যালঘু মানুষজন আমাদের দলে আসছেন।
বিগত নির্বাচনগুলিতে রাজ্যে ধারাবাহিকভাবে ভোট বাড়লেও বুথস্তরে বিজেপির সংগঠন যে এখনও সেভাবে মজবুত হয়নি তা দলের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন। অনেকে বলছেন, তারই জন্য অনেক বুথে এখনও কমিটিই তৈরি করে উঠতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে গেলে বুথস্তরের সংগঠনকে যে আরও শক্তিশালী করতে হবে, সেটাও বুঝতে পারছে বিজেপি নেতৃত্ব। আর সেই কারণেই এবার বুথস্তরের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছে নেতৃত্ব। আর সেটা করতে গিয়ে রাজ্য থেকে কয়েক সপ্তাহ আগেই নির্দিষ্টভাবে ২৩দফা নির্দেশিকাও পাঠানো হয়। বলা হয়েছে, মণ্ডলস্তরের সংগঠন ও মোর্চার পদাধিকারীদের পাঁচটি করে বুথের দায়িত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, যাঁরা মিসড কল দিয়ে সদস্য হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি রাজ্য বিজেপি থেকে যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, সেখানে বুথগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করতে বলা হয়েছে। যে বুথ কমিটিতে ২০জন বা তার বেশি সদস্য আছেন এবং বিগত নির্বাচনে ৫০শতাংশ বা তার বেশি ভোট মিলেছে সেগুলি ‘এ’। যেসব বুথে দশজনের বেশি সদস্য আর ভোট ৩৫-৫০ শতাংশ সেগুলি ‘বি’, এইভাবে ভাগ করা হয়েছে। নদীয়া জেলায় সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ২৭.৪৪শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু মানুষের বাস চাপড়া ব্লকে, ৬২.৮শতাংশ। তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলেন, অন্যান্য ধর্মের মানুষজনদের নিয়ে ওদের চিন্তা নেই। হিন্দুদের নিয়েই চিন্তা। কিন্তু হিন্দুদের জন্যও ওরা সবকিছু করতে পারছে না। ওরা বিভাজনের রাজনীতি আমদানি করছে। ওরা কমিটি করতে পারবে না, এটা তো স্বাভাবিক। সংখ্যালঘু মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন।