নেতাজির মহানিষ্ক্রমণ – সঙ্গী, ‘বি এল এ ৭১৬৯’
১৯৪১ সালের ১৬ জানুয়ারি। গৃহবন্দী সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশ পুলিসের নজর এড়িয়ে মধ্যরাতে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে পালালেন। বাড়ির ওয়েন্ডারার গাড়িটি চড়ে। ভাইপো শিশির বসু গাড়ি চালিয়ে কাকাকে পৌঁছে দিলেন তখনকার বিহারের গোমো রেল স্টেশনে। সেখান থেকে দিল্লি-কালকা মেল। পায়ে হেঁটে পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে পেশোয়ার, কাবুল, সেখান থেকে মস্কো, বার্লিন। ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। বাকিটা ইতিহাস।
নেতাজির অন্তর্ধানের সঙ্গী, ‘বি এল এ ৭১৬৯’ নম্বরপ্লেটের সেই ওয়ান্ডেরার গাড়িটি এখনও রাখা আছে এলগিন রোডের নেতাজি ভবনে। এই ঐতিহাসিক গাড়িটি সংস্কারের কথা প্রথম ভেবেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ওয়েন্ডারার গাড়ির আদি নির্মাতা যে জার্মান সংস্থা, সেই অটোগ্র্যান্ড অডি–কেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে। জার্মান বিশেষজ্ঞ কারিগররা একটু একটু করে গাড়িটিকে ফিরিয়ে দেন তার পুরনো চেহারায়।
১৯৩৭ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎ বসু এই গাড়িটি কিনেছিলেন। সেইসময় গাড়িটির দাম ছিল ৪.৬৮০ টাকা। গাড়িটি রেজিস্ট্রি করেছিলেন তাঁর পুত্র শিশিরকুমার বসুর নামে। বহু স্মৃতিবিজড়িত এই গাড়ি সম্পর্কে এখনও আবেগতাড়িত বসু পরিবার। একসময় নিয়মিত এই গাড়িটি ব্যবহার করা হত। গাড়িটির সিটে সবসময় পরিষ্কার কাপড় পাতা থাকত। এমন অনেক সময় হয়েছে গাড়িটি ব্রেক ডাউন করেছে এবং রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে নেমে গাড়ি ঠেলতে হয়েছে বসু পরিবারের সদস্যদের।
১৯৭৮ সালে শেষবার এই গাড়িটি চালান সাংসদ ড. সুগত বসু। সেই সময় সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি করতে এখানে এসেছিল জাপানের এক টিভি সংস্থা।