এবার জনবহুল এলাকায় গরম দুধের কাউন্টার খোলার উদ্যোগ রাজ্যের
‘মাটির ভাঁড়ে গরম দুধ খেয়ে যান। দাম মাত্র ১০ টাকা’। গলার আওয়াজ শুনে সকল পথচলতি মানুষের নজরই কাউন্টারের দিকে। হবে নাই বা কেন, কারণ যিনি এই আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি কোনও দুধ বিক্রেতা নয়। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ (Swapan Debnath)। রবিবার নাদনঘাটে রাজ্যের প্রথম গরম দুধের সরকারি কাউন্টারের উদ্বোধনের পর এমনই ভূমিকায় দেখা গেল মন্ত্রীকে। ভিতরে গ্যাস স্টোভে দুধ জ্বাল দেওয়া চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য স্টলের সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। বিক্রেতার মতোই টাকা নিয়ে মন্ত্রী তাঁদের হাতে ভাঁড়ভর্তি গরম দুধ তুলে দেন। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে নাদনঘাটের শ্রীরামপুরের এই স্টলে মিলছে ছাগল, গোরু ও মোষের দুধ।
জানা গিয়েছে, এই স্টল থেকে গরম দুধ বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self Help Group)। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার যোগরাজ তামাং, গো-সম্পদ দপ্তরের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মিন্টু চৌধুরী প্রমুখ। এদিন ৩০ মিনিটের মধ্যে ১৩৬ ভাঁড় গরম দুধ বিক্রি হয়। তারমধ্যে গোরু ও ছাগলের দুধের চাহিদা ছিল বেশি। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে পাঁচ কুইন্টাল দুধ শেষ হয়ে যায়। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রতিটি জনবহুল এলাকায় গরম দুধের স্টল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে একটি গরম দুধের স্টল তৈরির কাজ চলছে। চলতি মাসেই তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। স্বপনবাবু বলেন, জনবহুল রাস্তার মোড়ে মোড়ে চা, কফির স্টল আছে। কোথাও গরম দুধের স্টল নেই। যাঁরা চা খেতে পছন্দ করেন না অথচ গরম দুধ খেতে ভালোবাসেন তাঁরা এবার এই সুবিধা পাবেন। রাস্তার পাশে মাটির ভাঁড়ে এক কাপ গরম দুধ পেলে অনেকেই খুশি হবেন। গোরু, ছাগল, মোষের দুধে পুষ্টিগুণ রয়েছে। গরম দুধ খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। তাঁদের কথা ভেবেই এই স্টল করা হয়েছে। মাটির ভাঁড়ে ১৭০ এমএল গরম দুধের দাম মাত্র ১০ টাকা। যিনি একবার খাবেন, তাঁকে বারবার এই গরম দুধ খাওয়ার কথা ভাবতে হবে।
এদিন নদীয়ার হাঁসখালি থেকে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে কৃষিমেলা দেখতে এসেছিলেন লোকনাথ কুণ্ডু। মেলায় গরম দুধ বিক্রি হচ্ছে শুনে চলে আসেন কাউন্টারে। ছেলে ও স্ত্রীকে এক কাপ করে গরম দুধ কিনে দেন। লোকনাথবাবু বলেন, আমি চা খেতে ভালোবাসি। কিন্তু আমার ছেলে ও স্ত্রী আবার গরম দুধের ভক্ত। বাড়িতে ওদের জন্য দেড় কিলো গোরুর দুধ কিনতে হয়। রাস্তাঘাটে কোথাও তো গরম দুধ (Milk) বিক্রি হয় না। এখানে গরম দুধ কিনতে পেরে ভালো লাগল। জনবহুল এলাকায় এই ধরনের স্টল পেলে তো আমাদের মতো পরিবারের ভালোই হয়। ১২ জানুয়ারি থেকে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে শুরু হয়েছে লোকসংস্কৃতি উৎসব। পাশাপাশি কৃষি ও হস্তশিল্প মেলাও চলছে। এদিন শ্রীরামপুর যুবসঙ্ঘের মাঠে প্রাণিসম্পদ দিবস পালন করা হয়। প্রাণী চিকিৎসকরা শতাধিক ছাগল, গোরু, বিড়াল, কুকুরের বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন। সেখানে মন্ত্রী ছাড়াও দপ্তরের ডিরেক্টর বিদ্যুৎবরণ রায় সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।