মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পে এবার চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রকল্পে এবার চাঙ্গা হবে উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতি। গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সেতু এবং একটি ওভার ব্রিজের উদ্বোধনের পর এমনটাই মনে করছেন উত্তরবঙ্গবাসী। একইসঙ্গে তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রীর ‘ড্রিম’ প্রজেক্ট ভোরের আলো পরিণত হবে আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম হাবে। শিল্পবিহীন উত্তরবঙ্গে উদ্যোগপতিরাও আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধীদের একাংশ বিষয়টি মেনেও নিয়েছে। তাই এই সাফল্যকেই এবার বিধানসভা ভোটের ময়দানে তুলে ধরবে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। এ জন্য তারা প্রচারের অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছে। সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলির মধ্যে ‘জয়ী’ সেতু অন্যতম। হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে তিস্তা নদীর উপর ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যা ৩.০২৯ কিমি দীর্ঘ। স্বাধীনতার এত বছর পর এই প্রথম দীর্ঘতম সেতু পেল উত্তরবঙ্গবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, হলদিবাড়ি কৃষি নির্ভর এলাকা। মূলত টম্যাটো চাষের জন্যই এই এলাকা বিখ্যাত। প্রতিবছর যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বাজারজাত করা যেত না টম্যাটো। তা মাঠেই নষ্ট হতো। কিংবা উপযুক্ত দামের অভাবে গবাদি পশুকে খাইয়ে দিতে হতো। এরফলে স্থানীয় কৃষকদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে। তবে জয়ী সেতু চালু হওয়ায় এবার হয়তো অবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। কেবলমাত্র স্থানীয় কৃষক নন, বৈদেশিক বাণিজ্যেও ব্যাপক সুবিধা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, শিলিগুড়ির বাগডোগরায় একটি বহুমুখী হিমঘর আছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে যেতে হতো ঘুরপথে। জয়ী সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় সেই পথ অনেকটাই কমেছে। উত্তরবঙ্গ উৎসবের (North Bengal Festival) মঞ্চ থেকে আরএকটি সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিনহাটার শীতলকুচি ও সিতাইয়ের মধ্যে যোগাযোগ সুগম করতে মানসাই নদীর উপর ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ৯৪৪.৫০ মিটার দীর্ঘ। সেতুগুলির উদ্বোধনের পর বণিক মহলও উচ্ছ্বসিত।
সিআইআই’ (CII) র উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জীব সাহা বলেন, ওই সেতু চালু হাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ এবং শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিশাল উপকার হল। এতে টম্যাটো সহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি ও তামাক নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় শিল্পস্থাপন করতে বাইরে থেকে উদ্যোগপতিরাও এখানে আসবেন বলে আশা করছি। ওই দিন মঞ্চ থেকে ফুলবাড়ি-গজলডোবার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করতে রোড ওভার ব্রিজের উদ্বোধন করা হয়। এই ব্রিজ ৭৩৫.৬ মিটার দীর্ঘ। স্বাভাবিকভাবেই শিলিগুড়ি শহর থেকে গজলডোবার দূরত্ব কমবে প্রায় চার কিমি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে শিলিগুড়ি থেকে গজলডোবা যেতে সময় লাগত প্রায় ৪৫ মিনিট। এখন তা কমে দাঁড়াবে মাত্র ২০ মিনিট। একইভাবে শিলিগুড়ির সঙ্গে চা বাগান ও জঙ্গল ঘেরা ডুয়ার্সের যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ হবে।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ওভার বিজের কাছেই অবস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ভোরের আলো। পাশেই ভামরীদেবী এবং দেবী চৌধুরানির মন্দির। উত্তরবঙ্গে ট্যুর অপারেটারদের একটি সংগঠনের শীর্ষ কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, ওই ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তা চালু হওয়ায় এবার ভোরের আলো ও ওই মন্দিরগুলিকে ঘিরে হেরিটেজ ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়ে তোলা সম্ভব হবে। পাশাপাশি গজলডোবা আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট হাবে পরিণত হবে বলে আশা করছি। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি যে গ্রামীণ অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পের সহায়ক, তা সিপিএম ও বিজেপির একাংশ নেতা মেনে নিয়েছেন। আড়ালে আবডালে সিপিএম ও বিজেপির কয়েকজন নেতা বলেন, প্রকল্পগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এদিকে ভোটের মুখে তৃণমূল এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারা এ ব্যাপারে প্রচারে নামার চিন্তাভাবনা করছে।