রাজ্য বাজেটে কল্পতরু মমতা
বিধানসভায় পেশ রাজ্য বাজেট। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে এ বার বাজেটে পেশ করতে পারছেন না। সেই মতো স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অন্য কোনও মন্ত্রী বাজেট পেশ করছেন, বিভিন্ন রাজ্যে এমন নজির অনেক রয়েছে। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পেশ করছেন, এমন নজির খুব কমই রয়েছে।
আর কয়েক মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ভোটের নির্ঘণ্টও ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিন মাসের জন্য ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার বাজেট এক নজরে:
আমি নিজে অনেক রেল বাজেট পেশ করেছি। বাজেটের সময় সাধারণত কেউ বাধা দেয় না। কিন্তু আমি জানি না আদেও কি বিজেপির সদস্যরা সেসব জানে?
বিশ্বব্যাপী অতিমারীর কারণে ভুগছে সারা দেশ। আম্পান বিপর্যয়ের পর অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্র কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমাদের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়তে পারতো।
কেন্দ্রের দ্বিমুখী বঞ্চনাকে ছাপিয়ে বাংলা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি সৌভাগ্য রবির উদয় দেখছি।
বিনিয়োগ মানচিত্রে বাংলা হয়ে উঠেছে নতুন গন্তব্য।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘এবার কেন্দ্র ভারতবর্ষ’। তাঁর অনুসরণে আমি বলব, এবার কেন্দ্র বাংলা।
বাংলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানে- একশো দিনের কাজে, ক্ষুদ্র শিল্পে, দক্ষতা বৃদ্ধিতে, গ্রামীণ বাড়ি নির্মাণে ।
২০১২- ২০১৮ সালে দারীদ্র দূরীকরণে আময়রা এক নম্বর স্থান অর্জন করেছি।
লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক নির্মানের ক্ষেত্রে এবছর ২০, ০০০ মেইল রাস্তা তৈরি করে বাংলা এক নম্বর স্থানে রয়েছে।
রাজ্যে কল্যাণমূলক কর্মসূচী চলছে চলবে।
তপশিলি, আদিবাসী মানুষদের জন্যে ১০০ নতুন ইংরাজি মাধ্যম স্কুল তৈরি হবে।
অলচিকি ভাষার জন্যে ৫০০ নতুন স্কুল তৈরি এবং ১৫০০ পার্শ্ব শিক্ষক নিযুক্ত করা হবে।
নেপালী, বাংলা, হিন্দি, উর্দু এবং কুড়মালি ভাষার জন্যে ১০০ নতুন স্কুল এবং ৩০০ পার্শ্ব শিক্ষক নিযুক্ত করা হবে।
চা বাগান এলাকায় ১০০ নতুন স্কুল এবং স্থানীয় ভাষার ১০০ নতুন স্কুল তৈরি হবে।
রাজবংশী ভাষার ২০০ নতুন বিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া ও আর্থিক সাহায্য করা হবে।
আন- এইডেড মাদ্রাসাগুলোকে সরকারি সাহায্য প্রদান করা হবে।
আগামী ৫ বছরে তপশিলি ও আদিবাসী জনজাতীর জন্যে ৩০ লক্ষ বাড়ি নির্মাণ ক্লরা হবে এবং মাটির বাড়িকে পাকা করে দেওয়া হবে।
কৃষক বন্ধুদের বার্ষিক আর্থিক সাহায্য ৫, ০০০ থেকে বাড়িয়ে ৬, ০০০ করা হবে।
নতুন কর্মসূচী ‘মাতৃ বন্দনা’- র আওতায় ১০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন হবে।
আবাসন এবং পরিবহণ শিল্পের সাথে যুক্ত ৪৫ লক্ষ শ্রমিককে বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হবে।
উদবাস্তু এলাকায় ৩০, ০০০ জমির দলিল ও পাট্টা বিলি করা হয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।
সরকার চা সুন্দরী প্রকল্প চালু করেছে। আগামী দুবছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
দেশনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের সমর্থনে নিউটাউনে আজাদহিন্দ স্মারক তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতি জেলায় জয়হিন্দ ভবন তৈরি করা হবে, যেখানে তরুনরা নিজেদের নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে পারবে।
কলকাতা পুলিশে নতুন নেতাজির ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হবে।
রাজ্যে ‘নেতাজি অর্থ যোজনা’ কমিশন গঠন করা হবে।
বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থা জুন মাসের পরেও চালু থাকবে। বরাদ্দ হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন জায়গায় স্বল্প মূল্যে কমিউনিটি কিচেন তৈরি করা হবে।
স্বাস্থ্যসাথী প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে চলবে। প্রতি তিনবছর অন্তর পুনর্নবীকরন করা যাবে এই কার্ড।
মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা সুষ্ঠভাবে পৌঁছতে দুয়ারে সরকার এবং পাড়ায় পাড়ায় সমাধান বছরে দুমাস ( অগাস্ট- সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর – ডিসেম্বর) করে হবে।
প্রতি তিন বছর অন্তর ১০, ০০০ ছাত্র- ছাত্রীকে শিক্ষানবীস হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে কাজ শেখার সুযোগ দেওয়া হবে। ইন্টার্নশিপের শেষে সরকারি চাকরিতে এরা অগ্রাধিকার পাবে। প্রকল্পের নাম যুবশক্তি।
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র- ছাত্রীদের একটি করে ট্যাব দেওয়া হবে।
আগামী শিক্ষা বর্ষ থেকে পার্শ্ব শিক্ষকরা প্রতিবছর ৩ শতাংশ হারে অর্ধিত পারিশ্রমিক পাবেন। ৬০ বছর বয়সে এককালীন ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে।
পথশ্রী প্রকল্পের অধীনে ৪৬,০০০ কিলোমিটার গ্রামীন রাস্তা তৈরি হবে। আগামি বছর ১০, ০০০ কিলোমিটার রাস্তা তোইরি ও সংস্কার করা হবে।
আগামী বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামীন রাস্তা রাজ্য সড়কের সাথে সংযুক্ত করা হবে।
নন্দীগ্রাম- হলদিয়া সংযুক্তকারী সেতু তৈরি করা হবে।
ডানলপ এলাকায় একটি উড়ালপুল তৈরি হবে, কোচবিহার- বক্সিরহাট এলাকায় ৯.৫ কিলোমিটার সেতু এবং বালাসন নদীর ওপর শিলিগুড়ি- দার্জিলিং সংযোগকারী সেতু তৈরি করা হবে।
ইএম বাইপাস থেকে নি\উটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল, রুবি- লাকিকাপুর উড়ালপুল, মা ফ্লাইওভার থেকে গুরু সদয় রোড পর্যন্ত উড়ালপুল তৈরি হবে।
উল্টোডাঙ্গা থেকে পোস্তা বাজার অবধি উড়ালপুল, পাইক পাড়া থেকে শিয়ালদা স্টেশন অবধি উড়ালপুল, গড়িয়া থেকে যাদবপুর উড়ালপুল, টলিগঞ্জ থেকে পিএ শাহ কানেক্টর অবধি উড়াল্পুল তৈরি হবে।
কোভিড অতিমারীতে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাজ্য সরকার তাই একটি সহায়ক প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পে ৫০, ০০০ থেকে ১০ লক্ষ টাকা অবধি ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হবে।
পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনসেনটিভ স্কিম চালু হবে আগামী অর্থবর্ষ থেকে।
যাত্রী পরিবহণে সবরকম যানবাহনে জুন অবধি রোড ট্যাক্স মুকুব করা হল।
আগামী দিনে মালদা, বালুরঘাট, কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে যাত্রী চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
পুর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর বন্দর প্রকল্পে ৭, ০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগণার আশানগরের প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প অচিরেই বিশ্বের মানিচিত্রে স্থান করে নেবে।
দেওচা পাচমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্লক। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ২ লক্ষ মানুষ কাজের সুযোগ পাবে।
রঘুনাথপুর শিল্প নগরী তৈরি হচ্ছে পুরুলিয়ায়ায়। এর নাম হবে ‘জঙ্গল সুন্দরী করমনোগিরী’।
অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চালু হবে।
সিলিকন ভ্যালিতে ২৪ টি আইটি কোম্পানিকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
গত দশ বছরে ৪ লক্ষ শূন্য পদ পূরণ হয়েছে। আগামী তিন বছরে তা সম্পূর্ন করব।
এই বাজেট প্রস্তাবের ফলে দেড় কোটি নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে।
২০২১- ২২ সালের জন্যে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ।