উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

তৃণমূলের গৌর বিজেপিতে, বিদ্রোহ গেরুয়া শিবিরে

March 10, 2021 | 2 min read

জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে(Gourchandra Mondal) দলে টেনে তৃণমূলকে(TMC) ধাক্কা দিতে গিয়ে ভোটের মুখে বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব নিজেরাই চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। আদি বিজেপি কর্মী- নেতাদের বিদ্রোহ সামলাতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এমনকী এই দলবদলুকে ভোটে প্রার্থী করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন স্থানীয় এক আদি বিজেপি নেতা। গৌরকে নিয়ে ক্ষোভের কারণকী?


গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে রিগিং করে জেতার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। এমনকী মামলাও ঠুকেছিল। মানিকচকের বিজেপি নেতা অনিল মণ্ডল  মঙ্গলবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে ওই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী করা হলে প্রয়োজনে নির্দল হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লড়বেন। এই জোড়া চাপে কার্যত চরম ফাঁপরে পড়েছে মালদহ জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি গৌরবাবুর বিরুদ্ধে গত জেলাপরিষদ নির্বাচনে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। যা মানিকচকের আদি বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভ আরও চাগিয়ে তুলছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানিকচকের একটি আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন গৌরবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন অনিলবাবু। ভোটে গৌরবাবুকে জয়ী ঘোষণা করার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল বিজেপি। সেই দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ ছিল,নির্বাচনের দিন ব্যাপক রিগিং করেছিলেন গৌরবাবুর সমর্থকরা। এমনকি গণনার দিনও বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে তাদের প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি।


বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে পরাজিত প্রার্থী অনিল মণ্ডল আদালতের শরণাপন্ন হন। তাঁর পাশে দাঁড়ায় বিজেপি। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন অবস্থাতেই রয়েছে। এরই মধ্যে সোমবার জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য সহ কলকাতায় বিজেপিতে যোগদান করেছেন গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তাঁর এই যোগদানের বিষয়টি নিয়েই বিজেপির অন্দরে সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।


অনিল মণ্ডল মঙ্গলবার বলেন, গৌরচন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে এখনও জোর করে বিজেপিকে ভোটে হারানোর মামলা চলছে। আমি সেই মামলা তুলতে রাজি নই। আমার বিরুদ্ধে গৌরচন্দ্রের প্ররোচনায় পাঁচটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রায় হাজার খানেক বিজেপি কর্মীকে সেজন্য ভুগতে হয়েছে। গৌরবাবুকে দলে নেওয়ার বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু ওঁকে মানিকচক কেন্দ্রে দলের প্রার্থী করা হলে প্রয়োজনে আমি নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে ওঁকে হারাব। আমি একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মী। প্রায় ২০ বছর ধরে দল করছি। অন্য দলে আমি যাব না। কিন্তু গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে প্রার্থী করা হলে নির্দল হয়ে লড়াই করবই।


বিষয়টি নিয়ে যে বিজেপিও অস্বস্তিতে রয়েছে তা দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা বিজেপি সভাপতি গোবিন্দ্রচন্দ্র মণ্ডল বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমি অনিলবাবুর সঙ্গে কথা বলব। গৌরবাবু এখন আমাদের দলেরই অংশ। তাঁর সঙ্গেও কথা হবে। সমস্যা মিটে যাবে বলেও দাবি করেন গোবিন্দবাবু। দলে তেমন কোনও সমস্যা নেই। অন্যদিকে গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে দলে নেওয়ায় নতুন করে পুরানো কর্মীদের মধ্যে যাতে অসন্তোষ তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ টিমকে মানিকচকে পাঠানো হয়েছে। অনিল মণ্ডল বলেন, দলের টিম মানিকচকে এসে মণ্ডল কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিজেপি নেতৃত্বের উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে।এদিকে বিষয়টি নিয়ে গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি পুরানো মামলা রয়েছে, একথা ঠিকই। তবে আমি এখন বিজেপিরই লোক। দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে এব্যাপারে কথা হবে। অনিলবাবুর সঙ্গেও কথা হবে। আশা রাখছি সমস্যা মিটতে সময় লাগবে না। এদিকে বিজেপির এই নতুন বিড়ম্বনা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের অন্যতম কো অর্ডিনেটর হেমন্ত শর্মার বক্তব্য, আসলে আদি ও নব্য বিজেপির মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#adi bjp, #Protest, #bjp vs bjp, #gour chandra mondal

আরো দেখুন