রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ-অশান্তি, বাকি প্রার্থী বাছতে হিমশিম বিজেপি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) সফর চলাকালীনই প্রার্থী বাছাই ঘিরে কার্যত ‘গৃহযুদ্ধ’ বেঁধে গেল গেরুয়া শিবিরে! সোমবার কলকাতায় দলীয় কর্মীদের তুমুল বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল হেস্টিংসের নির্বাচনী কার্যালয়। হুগলির চুঁচুড়ায় ভাঙচুর করা হল জেলা সাংগঠনিক অফিস। এক মণ্ডল সভাপতিকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ভোটযুদ্ধ শুরুর আগেই এভাবে ঘরের ঝামেলা পথে নেমে আসায় বেশ বেকায়দায় বঙ্গ বিজেপি (BJP)। সবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম চারটি দফা মিলিয়ে ১২৩ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছে। বাকি এখনও ১৭১টি আসন। এখনই যদি এই অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী ঘোষণার পর ঠিক কী পরিস্থিতি তৈরি হবে? তা সামলানোই বা যাবে কীভাবে? আপাতত এই প্রশ্নে চরম উদ্বেগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রার্থী বাছতে মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বঙ্গ নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।
রবিবার তৃতীয় এবং চতুর্থ দফা নির্বাচনের ৭৫টির মধ্যে ৬৩টি কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে পদ্মশিবির। তারপর থেকেই সিঙ্গুর, চুঁচুড়ায় বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভ কার্যত মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল। ক্ষুব্ধ শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়রা। পরবর্তী প্রার্থী তালিকাতেও সাংসদদের নাম থাকা নিয়ে তুমুল জল্পনা ছড়িয়েছে দলের অন্দরে। এদিন সেই ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ে কলকাতায়। হেস্টিংসে দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ একাধিক জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা। এদিন দুপুরে প্রথমে হাওড়ার পাঁচলা এবং উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের দাবিতে হেস্টিংসের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশো বিক্ষুব্ধ কর্মী। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের এক দলবদলু নেতা এই দুই কেন্দ্রে নিজের পছন্দের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। অথচ, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বিজেপির সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছেন, সেই আদি নেতারা তালিকায় নেই। তাঁদেরকেই প্রার্থী করার দাবি তোলেন বিক্ষুব্ধরা। সন্ধ্যায় রায়দিঘি কেন্দ্রের প্রার্থী বদলের দাবিতে ফের এক দফা বিক্ষোভ হয়। পার্টি অফিসে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, এমপি অর্জুন সিং সহ একাধিক নেতা। বিক্ষোভ সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় কলকাতা পুলিসকে। অর্জুন সিং জানিয়েছেন, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বক্তব্য দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’ নেতাদের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
হেস্টিংসের বিক্ষোভের রেশ মিটতে না মিটতেই হুগলিতে বিজেপির দলীয় অফিস ভাঙচুরের ঘটনা সামনে আসে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রাক্তন নেতাকে বিজেপি নেতৃত্ব প্রার্থী করতে পারে—এই গুঞ্জনে সকাল থেকে উত্তাপ চড়ছিল। বিকেলে সপ্তগ্রামের কর্মী-সমর্থকরা পার্টি অফিসে চলে আসেন। তাঁদের দাবি, দলবদলু নেতাকে প্রার্থী করা যাবে না। উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বেধে যায়। এরপরেই জেলা অফিসে ঢুকে দেদার ভাঙচুর চালান বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের ঠেকাতে গিয়ে মার খান এক মণ্ডল সভাপতি। দলের জেলানেত্রী সুরভি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘তৃণমূল দলীয় সমর্থকদের পাঠিয়ে অফিসে ভাঙচুর করেছে।’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অসিত মজুমদার। এদিন চন্দননগরের বিজেপি প্রার্থী দীপাঞ্জন গুহকে নিয়েও প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলীয় কর্মীরা।
ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহনেতা অমিত মালব্য অবশ্য বলেছেন, ‘নির্বাচন পর্বে রাজনৈতিক কর্মীরা টিকিট চাইবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে যে রাজ্যে দলের জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে এই ঘটনা ঘটবে।’ যদিও বিজেপির অন্দরের ব্যাখ্যা, দলে দলে লোক যোগদান করালেই যে জেতার মতো যোগ্য প্রার্থী তৈরি হয় না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই কারণেই টিকিট দিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এমপি, তারকা এবং দলবদলুদের।