‘আমি তোমাদেরই লোক’ – কামারহাটিকে বলছেন মদন
ওই যে হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে… দেখতে পাচ্ছিস? স্বল্প পরিসর রাস্তায় একরকম গুঁতোগুঁতি করে হাঁটছেন জনা কুড়ি লোক। তাঁদের হাঁটুর ফাঁক দিয়ে ‘হলুদ পাঞ্জাবি’ খুঁজছে এক খুদে। সামনে হাঁটছেন কামারহাটি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। বড় রাস্তা ছেড়ে অলি, গলি, তস্য গলি। রাস্তাটা চওড়ায় মেরেকেটে আড়াই ফুট। রাস্তা বলতে নর্দমার উপরের কংক্রিটের স্ল্যাব। এক পাশে প্রাচীর। অন্য পাশে সার দিয়ে টালির ঘর। কোথাও তৈরি হচ্ছে নতুন পাকাবাড়ি। রাস্তাতেই অস্থায়ী দরমার ঘরে গৃহস্থের সংসার। চলেছেন মদন মিত্র। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে। দূরে বড় রাস্তায় তখন বাজছে—‘পাবলিক সব বোঝে/ভরসার লোক খোঁজে… ওহ্ লাভলি!’
তাল ধরেছে গোটা লেনিন নগর। কামারহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এখানেই বাড়ি বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। ১১১, আর এন টেগোর রোড। মদনবাবু অবশ্য সে পথে না গিয়ে চললেন আরেকটু ভিতরে। গলি থেকে গলিতে। মিশে গেলেন আট থেকে আশির ভিড়ে। বিজেপির পতাকা অবশ্য ভালোই উড়তে দেখা গেল। দেওয়াল লিখন ও ছিল তাদের প্রার্থী অনিন্দ্য রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তুলনায় সিপিএমের নাম-নিশান কম। লড়াই কী এবারও কঠিন? নেত্রীর কথায় ‘ফেমাস’ মদন মিত্র অবশ্য মানতে নারাজ।
গলায় ইনফেকশন। খাবারে অরুচি। অনুগামীরা বলছেন, ‘আগের দিনের প্রচারের ধকল।’ প্রচণ্ড রোদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন মদনবাবু। বৃহস্পতিবারও প্রচার শুরু করলেন সূর্যকে প্রায় মধ্যগগনে রেখে। তৃণমূলের প্রতীক আঁকা গোল টুপি মাথায়। সামনে অটো। তাতে মাইক বাঁধা। ঘোষণা হচ্ছে, ‘দুয়ারে মদন’। তারপর একটি মিনিডোর। সেখানে রাখা সাউন্ড বক্সে বাজছে খেলা হবে, লাভলির মতো ‘ভোটমুখী’ গান। খানিকটা ব্যবধান রেখেই বাড়ি বাড়ি প্রচার সারতে শুরু করলেন মদন মিত্র। সঙ্গী স্থানীয় প্রাক্তন পুরপিতা সহ দলীয় পতাকা, তেরঙা বেলুন হাতে একঝাঁক কর্মী। তিনি যত হেঁটেছেন, ততই বেড়েছে সেই মিছিলের দৈর্ঘ্য।
বছর দশেক আগেও লেনিন নগর এমন ছিল না। ২০১১ সালে বিধায়ক হন মদনবাবু (Madan Mitra)। তারপর থেকেই নাকি উন্নয়নের জোয়ার! রাস্তা, আলো, জলের লাইন, বাংলা আবাস যোজনার বাড়ির মতো একাধিক পরিষেবা পাচ্ছেন মানুষ। প্রচারের ফাঁকেই জানালেন মদনবাবু। গত বিধানসভা নির্বাচনে সারদা সংক্রান্ত মামলায় জেলবন্দি অবস্থাতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ভোটে। সেই মানসবাবু এবার লড়াইয়ের ময়দানে নেই। থেকে গিয়েছেন মদন মিত্র। এদিন প্রচারের ফাঁকে বলছিলেন, ‘গতবার বাম-কংগ্রেস মিলে বলেছিল মদন মিত্র আর ফিরে আসবে না। তাতে মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছর বিধায়ক না থেকেও কামারহাটির বাসিন্দাদের পাশে ছিলাম। মানুষ এটুকু আশ্বস্ত হয়েছেন যে, মদন মিত্র আমাদের ছেড়ে যায়নি।’
এদিন প্রচারেও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে নতুন ভোটারদের মধ্যে সেই আস্থার ঝলক দেখা গেল। তৃণমূল (Trinamool) প্রার্থীকে দেখে সকলের ঠোঁটেই হাসি। সেলফি, ছবি তোলার হিড়িক। কেউ কেউ অনুযোগ জানালেন সামান্য। কাউকেই ফেরাননি মদনবাবু। শুরুতে মুখে মাস্ক থাকলেও ছবির আবদারে খুলতে হয়। প্রতিটি দরজার সামনেই হাতজোড় করলেন। হাত নাড়ালেনও। অনুগামীদের আর্জি—‘ভোটটা এবার কিন্তু দাদাকেই…।’ কথা শেষ করতে দিচ্ছিলেন না অধিকাংশ গৃহস্থই। কিশোর পল্লির গলিতে সিপিএমের এক জোনাল কমিটির সদস্য জানলা দিয়ে হাত মেলালেন মদনবাবুর সঙ্গে। এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে ঢুকে খবরাখবরও নিলেন। ঘণ্টাদুয়েকের প্রচার পর্ব শেষ হল প্রায় পৌনে দু’টোয়। বিকেলে ফের প্রচার ১৫ নম্বরেই।
কী বুঝলেন? ফেরার গাড়িতে ওঠার আগে প্রশ্নটা শুনে বলে গেলেন দু’টো শব্দ—খেলা হবে।