বয়ালে তৃণমূল দম্পতিকে মারধর বিজেপির
নন্দীগ্রাম থানার বয়ালে সালিশি সভা বসিয়ে তৃণমূল দম্পতিকে মারধর করল বিজেপি (BJP)। রবিবার বিকেলে বয়াল-২গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাণীবিতান গ্রামে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিগৃহীত তৃণমূল সমর্থক ওই দম্পতির নাম নন্দলাল মাইতি ও ঝর্ণা মাইতি। সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ নন্দীগ্রাম থানার পুলিস এবং আধা সেনা নন্দলালবাবুর বাড়িতে যায়। পুলিস অভিযোগ নিতে চাইলেও প্রাণভয়ে ওই দম্পতি কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। বাড়িতে পুলিস দেখে কেঁদে ফেলেন ঝর্ণাদেবী। কীভাবে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে কাটছে তারই বর্ণনা দেন ঝর্ণাদেবী। পুলিস অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও ওই দম্পতি লিখিত অভিযোগে রাজি হননি। গোটা ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়।
গত ৩ এপ্রিল বয়াল-২গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তৃতীয়খণ্ড-জালপাই গ্রামে ছ’জন তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ওই তৃণমূল কর্মীদের মারধরও করা হয়। সেই ঘটনায় জড়িত স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর করা হয়। ঘটনার পর আতঙ্কে তৃতীয়খণ্ড-জালপাই বুথের তৃণমূলের সভাপতি অশোক পাণ্ডে সহ মোট ১৬জন সক্রিয় কর্মী ঘরছাড়া। ওই কেস প্রত্যাহারের জন্য এদিন তৃতীয়খণ্ড-জালপাই গ্রাম লাগোয়া বাণীবিতান হাইস্কুলের কাছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী নিমাই দাসকে ডেকে পাঠায় বিজেপির লোকজন। তাঁকে মারধর করার পর ছেড়ে দেয় তারা। উল্লেখ্য, পূর্তদপ্তরের একটি রাস্তার দু’দিকে বাণীবিতান ও তৃতীয়খণ্ড-জালপাই গ্রাম।
বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ বিজেপির লোকজন ওই স্কুলের সামনে নন্দলাল মাইতি এবং তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা মাইতিকে ডেকে পাঠায়। স্কুল লাগোয়া হরিমন্দিরের সামনে তখন শতাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সালিশি সভা হয়। সেখানে নন্দলালবাবু এবং তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গত ৩এপ্রিল তৃতীয়খণ্ড-জালপাই গ্রামে ছ’জন তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কেস প্রত্যাহারের জন্য নন্দলালবাবুকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে চাপ দেওয়া হয়। ভোটের দিন নন্দলালবাবুর সহযোগিতায় তৃণমূল বহিরাগতদের জড়ো করেছিল বলে বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ। রাত সাড়ে ৯টার সময় ওই দম্পতি বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওই ঘটনায় গোটা পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। ভোট মিটে যাওয়ার পরও বয়াল অশান্ত। বিজেপির গুন্ডামিতে স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন এলাকাছাড়া। কিন্তু, পুলিস এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। বয়াল-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি গৌতম পাল বলেন, নন্দীগ্রাম থানার পুলিস পক্ষপাতদুষ্ট কাজ করছে। সেজন্য বিজেপির লোকজন বুক ফুলিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
নিগৃহীত তৃণমূল কর্মী নন্দলাল মাইতি বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সালিশি শুরু হয়। গোটা গ্রামের বিজেপির লোকজন সেখানে হাজির ছিল। আমরা বহিরাগতদের গ্রামে এনেছি বলে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের বেদম মারধর করা হয়। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেস করলে গ্রামে টিকতে পারব না। তাই বাড়ি পর্যন্ত পুলিস এসে অভিযোগ নিতে চাইলেও সেটা করতে পারিনি। এখন আমরা নিরুপায় হয়ে গিয়েছি।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, নন্দলালবাবু কিংবা তাঁর স্ত্রীকে মারধর করা হয়নি। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আমাকে বিষয়টি জানানোর পর আমি স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে মারধরের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জেনেছি। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিস সুপার পার্থ ঘোষ বলেন, ভোট পরবর্তী হিংসা মোকাবিলায় কোনও রং ছাড়াই পুলিস ব্যবস্থা নিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।