করোনার চোখ রাঙানি সত্ত্বেও ঋণের ভার বাড়তে দেয়নি মমতার সরকার
গত অর্থবর্ষে গোটা বিশ্ব আর্থিক সঙ্কটে ভুগেছে। ভারতও তার বাইরে নয়। সেই ক্ষত এখনও জ্বলজল করছে পশ্চিমবঙ্গেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে ধার করতে হয়েছে সব রাজ্যকেই। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ঋণের অঙ্ক তেমন বাড়তে দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার। যেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে বহু রাজ্যই ধারের বহর অনেকটা বাড়িয়েছে, সেখানে বাংলার অবস্থা অনেকটাই ভালো।
শুধু যে করোনা (Covid19) সংক্রমণই আর্থিকভাবে রাজ্যকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে, তা নয়। করোনার সঙ্গে দোসর হয়েছিল সুপার সাইক্লোন উম-পুন। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড়ের দাপটে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার মেরামতিতে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নেয় কেন্দ্র, অভিযোগ এমনটাই। সেই খরচ সামলে যেটুকু রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা মোটেই শান্তি দেয়নি রাজ্য সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন জায়গায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ?
দেশের অন্যতম একটি ক্রেডিট রেটিং সংস্থার হিসেব বলছে, গত আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ ঋণ নিয়েছে ৫৯ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ঋণের অঙ্ক ছিল ৫৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের বহর বেড়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। তবে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় ভালো জায়গায় আছে ত্রিপুরা, ওড়িশা, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুর। এই রাজ্যগুলিতে ঋণ বৃদ্ধির হার পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম। পাশাপাশি এই রাজ্যগুলি গত আর্থিক বছরে যে অঙ্কের ঋণ নিয়েছে, তা তার আগের বছরের তুলনায় কম। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার এই পাঁচ রাজ্যের ক্ষেত্রেই ঋণাত্মক। ঋণের হার বৃদ্ধিতে বাকি রাজ্যগুলি টেক্কা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে।
ঋণের হারে যেমন বহু রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে এগিয়ে, তেমনই ঋণ নেওয়ার অঙ্কের নিরিখেও বাংলাকে টেক্কা দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্য। যেমন, চলতি আর্থিক বছরে তামিলনাড়ু ঋণ নিয়েছে ৮৭ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। কর্ণাটকের ঋণের অঙ্ক ৬৯ হাজার কোটি টাকা। মহারাষ্ট্রেরও ঋণের অঙ্ক একই, অর্থাৎ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশ ঋণ নিয়েছে ৭৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি ভোট প্রচারে বাংলায় এসে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ নানা মাপের নেতা। তাঁদের নিন্দামন্দের ঝুলিতে অন্যতম উপকরণ বাংলার ঋণ। কিন্তু চলতি আর্থিক বছরে এরাজ্যের পরিস্থিতি যে অনেকটাই ভালো, তা বলছে তথ্যই। বরং বঞ্চনার রাজনীতি যদি দিল্লি না করত, তাহলে রাজ্যের ঋণের পরিস্থিতি আরও উজ্জ্বল হতে পারত, এমনটাই মনে করছেন অনেকেই।