রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

হিটলার-মুসোলিনির মত ভোটারদের সাথে ‘মাইন্ড গেম’ খেলছে বিজেপি

April 13, 2021 | 2 min read

‘অন্তত দুশো আসনে জিতে সরকারে আসছি।’ —‘৩০টা আসনের মধ্যে ২৬টা পেয়ে গিয়েছি।’ — ‘৯১টির মধ্যে ৬৮-৭০টা আসন জিতে গিয়েছি।’ —‘নন্দীগ্রামে উনি হেরে গিয়েছেন।’ —‘চার দফা ভোটে তৃণমূল সাফ হয়ে গিয়েছে।’

নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ হতে এখনও ঢের দেরি। চার দফার ভোটগ্রহণ বাকি। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ভাষণ শুনলে তা অবশ্য বোঝা ভার। রাজ্যবাসীকে লাগাতার নির্বাচনী ফলাফল সম্পর্কে আগাম গ্যারান্টি দিচ্ছেন তাঁরা। মনস্তত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই জাতীয় বক্তব্য আসলে সুনিশ্চিত পরিকল্পনার অংশবিশেষ। এটা এক ধরনের ‘মাইন্ড গেম’ (Mind Game)। যুদ্ধ, খেলাধুলো, অপরাধবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যার ব্যবহার দেখা যায়। দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম সর্বত্র গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই ভোটারদের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে বিজেপি। যদিও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ‘মাইন্ড গেম’ কাজে লাগেনি। কিন্তু এটাও ঘটনা, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটা অংশের ভোটারদের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করা সম্ভব। বিশেষত, যাঁরা কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে ইভিএমের (EVM) বোতাম টেপা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। সম্ভবত এই কারণেই রাস্তাঘাট, ট্রেন-বাস, ঘরোয়া আড্ডায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘এবার কী হবে? কে আসবে?’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতি সচেতন অধিকাংশ মানুষ কাকে ভোট দেবেন সেব্যাপারে আগেভাগে মনস্থির করে ফেলেন। কিন্তু যাঁরা বেশি বেশি আলোচনা করে ‘বাজার’ বোঝার চেষ্টা করেন, সেই দোদুল্যমান ভোটারদের জন্যই ভাষণে এই ‘মাইন্ড গেম’-এর প্রয়োগ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার প্রচার করা হচ্ছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ শিবাজীপ্রতিম বসু সাফ জানাচ্ছেন, নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকে ‘মাইন্ড গেম’ খেলে মানুষকে বশ করার চেষ্টা করছে বিজেপি (BJP)। বিশ্বযুদ্ধের সময় একই কাজ করেছিল জাপান-জার্মান-ইতালির অক্ষশক্তি। হেরে যাচ্ছে জেনেও প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে ‘জয়ের হাওয়া’ তুলেছিল হিটলার-মুসোলিনিরা।

‘মাইন্ড গেম’-এর পাল্টাও কি ‘মাইন্ড গেম’-ই? ডঃ বসুর মতে, কিছুক্ষেত্রে এটা হতে পারে। কিন্তু রাস্তায় নেমে প্রচার, বাড়ি বাড়ি যোগাযোগ এবং জনসংযোগের তুলনা নেই। ‘মা‌ইন্ড গেম’ আসলে ভোটারদের চোখের সামনে কুয়াশা তৈরির চেষ্টা। এক ধরনের ‘ছায়াযুদ্ধ’। বাস্তবের সঙ্গে অনেক সময়ই তার কোনও সম্পর্ক থাকে না। বিরোধী সমর্থকদের মানসিকভাবে পরাজিত করার পাশাপাশি নিজের দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতেও এই খেলায় নেমেছেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদরা। মনোবিদ ডাঃ অমিত চক্রবর্তী বলছেন, ‘মাইন্ড গেম’ পাল্টা হওয়া উচিত ‘মাইন্ড গেম’ই। বিশিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ রঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, আসলে এটা হল ভোটারদের আচ্ছন্ন করার খেলা। তবে বুদ্ধিমান মানুষ এই খেলা ধরে ফেলেন। ভারতের অন্যতম নামকরা ভোট-কুশলী পল রাজা বলেন, আমরা এই পদ্ধতিকে বলি ‘পারসেপশন শিফট’ বা ধারণা বদলে ফেলা। কিন্তু ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মিথ্যাকেই সত্যি বলে বিশ্বাস করানো। আর তা করতেই সোশ্যাল মিডিয়া, এগজিট পোল থেকে শুরু করে নেতাদের একই সুরে ভাষণ—বহুমুখী আক্রমণ শানানো হয়। শুনলে অবাক হবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রচারের শিকার বেশি হন শিক্ষিত মানুষ। সাধারণভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ যেদিকে ভোট দেবে, তাঁদের লক্ষ্য থাকে সেদিকেই ভোটদানের।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ‘মাইন্ড গেম’ তাঁরা ভালোই জানেন, বলছেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী ফলপ্রকাশের আগে কেউ কীভাবে বলতে পারেন, তাঁরা কত ভোট পাচ্ছেন! যেন ইভিএম-এর ভিতর ঢুকে বসে রয়েছেন। বাংলার ভোটারদের এত বোকা ভাববেন না! বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, যেভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ সকাল সকাল ভোট দিচ্ছেন এবং দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন, তাতে জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত। তাই দলের শীর্ষনেতারা এই সুরে কথা বলছেন। এটা কোনও মাইন্ড গেম-টেম নয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #West Bengal Assembly Elections 2021

আরো দেখুন