গেরুয়া শিবিরের অন্দরের কোন্দল, পূর্বস্থলীতে স্বস্তিতে তৃণমূল
পূর্বস্থলী স্টেশনে নেমে রেললাইন পেরিয়ে পারুলিয়ার দিকে কিছুটা এগতেই নজরে এল, একটা ভাড়া বাড়ি। ওই বাড়িটাই এখন বিজেপির (BJP) কাছে মাথা ব্যথার মূল কারণ। কারণ, ওই বাড়িতেই থাকেন সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা আদি নেতা স্বপন ভট্টাচার্য। ভোট নিয়েই কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। তখনই নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন। বললেন, আদিরা দলে কোনও সম্মান পাননি। বছরের পর বছর দলে তাঁদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। সারা বছর তাঁরা পুলিসের লাঠি খেয়ে ঘরছাড়া থেকে দল করবেন, আর ভোটের সময় প্রার্থী হবেন অন্যজন। এবার এসবের ফল ভুগতে হবে।
বাড়ির বারান্দায় এক কোণে ছোটখাট চেয়ার-টেবিল। সেখানেই চায়ে চুমুক দিয়ে স্বপনবাবু বলেন, আমি দলের জন্য কম কিছু করিনি। জীবন বাজি রেখেছিলাম। বিনিময়ে দল আমায় কী দিল? এখন দল কর্পোরেট হয়ে গিয়েছে। তাই তো আমার অনুগামীদের সাবধান করে বলছি, বিজেপির পিছনে আর ছুটিস না। ওরা তোদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। পারুলিয়া বাজারে বসে আর এক যুবক বলেন, এখানে যাঁরা বিজেপিকে নিয়ে এল আজ তাঁদেরকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কী হবে তাতে? এর ফল তো ভুগতে হবে। রাজ্যে বাম জমানাতেও পূর্বস্থলীতে বিজেপির পদ্মফুলের পতাকা উড়ত। আর আজ সেসব ঝান্ডা ধরার লোকেরা নেই। আছে নেতাদের তল্পিবাহকরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পূর্বস্থলীতে শাসক বিরোধী হাওয়া থাকলেও বিজেপির অন্দরের এই প্রবল ক্ষোভেই তৃণমূলের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে।
২০১১ সালে পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ৭১হাজার ১০৭টি ভোট পেয়েছিল। আর সিপিএম পেয়েছিল ৬৮হাজার ৯৬৭টি ভোট। তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ২১৪০ভোটে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছর যেতেই ২০১৬ সালে শাসকদলকে সিপিএমের কাছে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল। সিপিএম এই কেন্দ্র থেকেই ২৮২৮টি ভোটে জয়ী হয়েছিল। দু’বারই লড়াই হয়েছিল তৃণমূলের তপন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিপিএমের প্রদীপকুমার সাহার। এই কেন্দ্রে প্রায় ২৯শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। আর বাকি ভোটারের মধ্যে অর্ধেক ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজন। ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষের ভোট এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর। সেটা বিজেপির হাতে থাকলেও এখন দলীয় কোন্দলে তারা জর্জরিত। আর সেই সুযোগই কাজে আসতে পারে তৃণমূলের। এক কথায়, এই কোন্দলই তুরুপের তাস হতে পারে শাসক দলের।
তৃণমূলের দাবি, এখানে যা উন্নয়ন করা হয়েছে তা মানুষ বুঝতে পারছেন। তার সুফল তো ভোটবাক্সে পড়বেই। প্রত্যেকের জন্য ১০০দিনের কাজের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তৃণমূল (Trinamool) প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, এবারে মানুষ ভাবনাচিন্তা করেই ভোটটা দেবেন। কারণ, তাঁরা আগেরবার সিপিএমকে এনে কী পেয়েছেন, ভালোই বুঝতে পারছেন? সিপিএম মানুষের কল্যাণে কোনও কাজই করেনি।
আগের বিধানসভায় সিপিএম এখানে জয় পেলেও এবারে তারা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে তারা। কারণ, এবারে লড়াই হবে ত্রিমুখী। বিজেপির দলীয় কোন্দলে ভোট কাটাকুটির অঙ্কে সিপিএম কি পারবে তাদের জয় ধরে রাখতে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। এ প্রসঙ্গে প্রার্থী প্রদীপ সাহা বলেন, আগেরবারের মতো এবারও আমরা এগিয়ে থাকব।
এবার এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। অনেকে ক্ষোভে দল ছাড়ছেন। তাই শুধু মোদি হাওয়া এখানে কাজ নাও করতে পারে। অন্তত এমনটাই বলছেন অনেকে। যদিও দলীয় প্রার্থী গোবর্ধন দাস বলেন, এবারে যে মানুষ আমাদের উপরই আস্থা রাখবেন, তা আগামী দিনে প্রমাণ হয়ে যাবে।