জরুরি দরকারে বেরোতে বিশেষ ক্যাব পরিষেবা
পুলিশি ধরপাকড়ের মুখে পড়ার আশঙ্কায় রবিবার পথেই নামলেন না বেশির ভাগ অ্যাপ-ক্যাব এবং ট্যাক্সির চালক। ফলে, হাওড়া, শিয়ালদহের মতো রেল স্টেশন এবং দমদম বিমানবন্দরে বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের হয়রানির মধ্যে পড়তে হল। ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য পরিবহণ নিগম ২৫টি বাস কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন রুটে চালিয়েছে। তবে স্টেশন ও বিমানবন্দর এলাকায় তা দেখা যায়নি বলেই দাবি।
লাগামছাড়া সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে রবিবার থেকে রাজ্যে গণপরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত যান ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা হয়েছে। সেই নির্দেশিকা পালন করতে সকাল থেকেই পুলিশ নেমেছিল পথে। ওই পরিস্থিতিতে বেরিয়ে যাত্রী পাওয়ার প্রশ্নে সংশয় যেমন ছিল, তেমনই পুলিশের কোপে পড়ার আশঙ্কায় সঙ্কুচিত ছিলেন ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব চালকদের বড় অংশ। এআইটিইউসি সংগঠনের সদস্য অ্যাপ-ক্যাব চালক মহম্মদ মুন্না এবং আদর্শ দাস বলেন, “যাত্রী তুলতে যাওয়ার পথে পুলিশের মামলার মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা আগের লকডাউনে হয়েছে। তাই বুকিং নিয়ে কেউ ঝামেলায় জড়াতে চাননি।” ফলে শহরের দু’টি প্রধান ক্যাব সংস্থা এ দিন তাদের অ্যাপ খোলা রাখলেও চালকেরা লগ ইন না করায় ক্যাব মেলেনি। গত বার লকডাউনের শেষ দিকে যাত্রীদের কাছে ট্রেন বা বিমানের বৈধ টিকিট থাকলে, তাকে পাস হিসেবে গণ্য করা হচ্ছিল। এ বছর ওই সংক্রান্ত নির্দেশ নিয়ে দ্বিধা থাকাও চালকদের সংশয়ের অন্য কারণ। এমনকি হাওড়া স্টেশন ও দমদম বিমানবন্দরে প্রি-পেড ট্যাক্সির কাউন্টার খোলা থাকলেও সেখানে বুকিং চেয়ে চালকদের লাইন দিতে দেখা যায়নি। হাতে গোনা ট্যাক্সিচালক স্টেশন ও বিমানবন্দর থেকে চড়া ভাড়ায় যাত্রী তুলেছেন।
আইএনটিটিইউসি-র ঘনিষ্ঠ ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা শম্ভুনাথ দে-র দাবি, “যাত্রীদের কথা ভেবেই পরিষেবা দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু হাওড়া ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা স্পষ্ট ছিল না।”
দূরপাল্লার ট্রেন থেকে হাওড়ায় নেমে সেখান থেকে নৈহাটি, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, বারাসত, ব্যারাকপুর যেতে গিয়ে বহু যাত্রী আটকে পড়েন। তাঁদের জন্য পরিবহণ নিগম পৃথক বাসের ব্যবস্থা করে। যদিও, বিমানবন্দরে এমন কোনও বাস চোখে পড়েনি বলেই দাবি। ফলে যাত্রীদের সেখানে অসুবিধায় পড়তে হয়। পুলিশের সাহায্যে ব্যক্তিগত গাড়ি আনিয়ে বাড়ি যান অনেকেই।
এ দিকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের নজিরবিহীন অর্থ সঙ্কটে। ফলে স্টেশন এবং বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য বাস পরিষেবা নিয়মিত হবে কি না, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না নিগমের আধিকারিকেরা। পরিস্থিতির মোকাবিলায়, ট্যাক্সি এবং ক্যাব চালকদের বড় অংশ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে যে সব জরুরি পরিষেবা চালু হচ্ছে, তাতে শামিল হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে চালক সংগঠন পুলিশকে আগাম পরিষেবা চালুর কথা জানিয়ে রাখছে। এ জন্য যাত্রীদের থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চিকিৎসা, প্রতিষেধক বা জরুরি প্রয়োজন সংক্রান্ত নথি চেয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে যাত্রী নামিয়ে পথে চালক পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়লে তা দেখাতে পারেন।
সিটু ও ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড আগেই অ্যাপ-ক্যাব চালকদের নিয়ে বিশেষ পরিষেবা চালু করেছে। এ জন্য হেল্পলাইন নম্বরও দিয়েছে তারা। এ দিন থেকে এআইটিইউসি-র ট্যাক্সি ও অ্যাপ-ক্যাব সংগঠন একই পরিষেবা শুরুর কথা জানিয়েছে। তাঁদের উদ্যোগে ক্যাবের জন্য ৯৮৩১৯৫৫৯১৩ এবং ৯৩৩০৮৭৭৩৮০ দু‘টি হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। হলুদ ট্যাক্সির জন্য ৯০০৭৫১৮৮৭৫ এবং ৭৮৯০৪২৯৫৫৮ নম্বরে হেল্পলাইন চালু হয়েছে। এ ছাড়াও সিটু ৯০০৭৭৭৪১১৬, ৯৮৭৪৪০৪০৪০, ৮৯১০৯০১৩২৭ এবং ৯৭৪৮৪৬৩২৩৭ নম্বরে হেল্পলাইন চালু করেছে। অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড ৯৭৪৮৪৬৩২৩৭ এবং ৯৮০৪৪৫৮০৪৫ নম্বরে হেল্পলাইন চালু করেছে। যাত্রীরা ওই সব নম্বরে ফোন করে প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে ক্যাব বুক করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।