পূর্ব মেদিনীপুরে স্বাভাবিক হল বিদ্যুৎ পরিষেবা
আগাম নিখুঁত পরিকল্পনা নেওয়ায় যশ ঘূর্ণিঝড়ের ছ’দিনের মাথায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হল। তবে এখনও বহু জায়গায় জল জমে থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২৫মে সাইক্লোনে জেলায় বণ্টন সংস্থার ৬১৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৯০৯টি ইলেক্ট্রিক পোল এবং ১৮৫টি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বহু যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও বিদ্যুৎ পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য সাইক্লোন থেমে যাওয়ার পর থেকেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন বণ্টন সংস্থার কর্মকর্তা থেকে ঠিকাদার নিযুক্ত শ্রমিকরা। ধাপে ধাপে বিভিন্ন জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক করে তোলা হয়।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর দীঘায় সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠকের আগে ১০০ শতাংশ জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট দেন বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার। শনিবার আরও বেশকিছু জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়। উপকূলবর্তী কিছু এলাকা বাদে জেলায় প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে।
২০২০ সালে ২০মে উম-পুন সুপার সাইক্লোনের পর জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতে এক মাস সময় লেগেছিল। তবে, সেবার আরও বড় বিপর্যয় হয়েছিল। গতবারের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এবার সাইক্লোন মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এজন্য গোটা জেলায় মোট ১০৬০ কর্মী মোতায়েন করা হয়। শুধু তাই নয়, আগেভাগে প্রতিটি সাপ্লাই স্টেশনকে ৭০টি করে ইলেক্ট্রিক খুঁটি দেওয়া হয়েছিল। আগাম সরঞ্জাম এবং কর্মীদের মজুত রাখার কারণেই অনেক দ্রুত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছে বলে বণ্টন সংস্থার কর্মীরা দাবি করছেন।
কোলাঘাট ব্লকের কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আসুরালি গ্রামে একটি স্লুইস গেটের অ্যাপ্রোচ রোড ধসে গিয়ে সেখার ইলেক্ট্রিক খুঁটি পড়ে যায়। যেকারণে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। এরকম খেজুরি-২গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওলিচক গ্রাম এখনও জলের তলায়। সেখানে বেশকিছু খুঁটি ভেঙে পড়ে। ওই এলাকায় জল না নামার কারণে সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ করা যায়নি। এছাড়া খেজুরির অন্যান্য জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। সাইক্লোনে নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল। বেশিরভাগ জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক। রামনগর-১ ও ২ ব্লকের উপকূল এলাকা এবং দেশপ্রাণ ব্লকের উপকূলবর্তী কিছু জায়গায় পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যেমন, রামনগর-১ ব্লকের অন্তর্গত তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্করপুর এলাকা ছাড়া অন্যত্র পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। কারণ, বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। যে কারণে ট্যাংরামারি, বোধড়া, যশিপুর, চাঁদপুর, জলধা প্রভৃতি এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিশ্বজিৎ জানা বলেন, বেশিরভাগ এলাকা এখনও জলমগ্ন। তাই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। পানীয় জলের সমস্যাও হচ্ছে। বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামলকুমার হাজরা বলেন, বেশিরভাগ জায়গায় আমরা বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করেছি। কিছু জায়গায় কাজ চলছে। দু’-একদিনের মধ্যেই সর্বত্র পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।