শুভেন্দুর সাথে দ্বন্দ্বই কি মুকুলের ‘ঘর ওয়াপসির’ কারণ?
মুকুল যে বিজেপি ছাড়তে চলেছিলেন এ জল্পনা বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল। গত কয়েকদিন ধরেই মুকুল বিজেপি-র থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন। দলের বৈঠকেও যাননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বটে। কিন্তু তা-ও খানিকটা অনীহা নিয়েই। ভোটের আগে এবং পরে তাঁকে কোনও সাংগঠনিক ভূমিকায় সে ভাবে দেখাও যায়নি। বিধায়ক হয়েছেন বটে। কিন্তু শপথ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় তাঁকে দেখা যায়নি। বরং স্ত্রী-র অসুস্থতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র দূরত্ব বাড়ছিল।
তার পাশাপাশিই পাল্লা দিয়ে দূরত্ব কমছিল তৃণমূলের সঙ্গে। মমতা ভোটের আগে থেকে মুকুল সম্পর্কে প্রকাশ্যেই সহানুভূতিশীল থেকেছেন। মুকুলও (Mukul Roy) প্রচারে নেমে মমতা-বিরোধী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ফলে অতীতের ‘বৈরিতা’ অনেকটাই কমেছে। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে সামগ্রিক ভাবে বিজেপি (BJP) শিবিরের তরফে মুকুলের প্রতি ‘ঔদাসীন্য’। সব মিলিয়ে পদ্মশিবিরে খুব স্বচ্ছন্দে ছিলেন না মুকুল।
অনেকেই মনে করছেন মুকুলের ‘ঘর ওয়াপসির’ একটা বড় কারণ শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে ২০১৪ সাল থেকে দুজনেই যখন তৃণমূলে ছিলেন। তৃণমূলের যুব সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দুকে সরান মুকুল। তারপর থেকেই এই দুই দুঁদে নেতার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
২০১৭ সালে মুকুল রায় তৃণমূল (Trinamool) ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর জোয়ার এসেছিল গেরুয়া শিবিরে। মুকুল রায়কে সামনে রেখে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে প্রভূত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। আর মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূলকে ভাঙার কাজও মসৃণ গতিতে এগোচ্ছিল। আর তা করেই সাফল্য এসছিল দুই নির্বাচনে।
এদিকে মুকুল রায় বিজেপিতে আসার পর ধীরে ধীরে তাঁর অনুগামীরা ভিড় জমিয়েছিলেন বিজেপিতে। সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা থেকে শুরু করে সব্যসাচী দত্ত, দুলাল বর-রা যোগ দিয়েছিলেন গেরুয়া শিবির। তাঁদেরকে গুরুত্বের পদেও বসিয়েছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু তাঁরা পদাসীন হলেও গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না বর্তমানে।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে আসার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুকুল রায়ের উপর নির্ভর করাটা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। বরং শুভেন্দু অধিকারী ২০২১-এর নির্বাচনের আগে থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছেন। মুকুল রায়কে ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে। স্বভাবতই তাঁর অনুগামীরাও অনেকটা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন।
এমনকি দুজনেই বিধায়ক পদে জেতা সত্ত্বেও বিরোধী দলনেতার আসনেও মুকুলকে বাদ দিয়ে শুভেন্দুকে বসানো হয়েছে। মুকুলকে সরিয়ে শুভেন্দুকে সামনে আনাই কাল হল বিজেপির। তাতেই বিজেপি ফাঁকা করে তৃণমূলের ঘর আলো করতে চলেছেন মুকুল সহ তাঁর অনুগামীরা। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।