বাংলায় নজির, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে হল বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন
সাড়ে চার বছর ধরে ব্লাড ক্যান্সারে (Blood Cancer) ভুগছেন হুগলি জেলার উত্তরপাড়া-ভদ্রকালীর বাসিন্দা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। হাওড়ার একটি নামী বেসরকারি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বছর সাতষট্টির ওই প্রৌঢ়। কেমোথেরাপি হয়েছে। এবার প্রাণ বাঁচাতে করতে হবে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন (Bone Marrow Transplant)। স্বামী-স্ত্রী’র সংসার। গত ক’বছর ধরে পরিবারের আয়ের সংস্থান নেই। কীভাবে হবে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না প্রশান্তবাবু। তাঁর সহায় হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড (Swasthya Sathi Card)।
রাজ্যে এই প্রথমবার ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের অধীনে ব্লাড ক্যান্সার রোগীর বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন হতে চলেছে। আজ, শনিবার থেকেই শুরু হবে তার প্রক্রিয়া। চলবে আগামী ১৫ দিন। সূত্রের খবর, বাংলায় আর কিছুদিনের মধ্যে প্রথমবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনাও চলছে। শীঘ্রই ইএমবাইপাস লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে তা হওয়ার কথা। রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্যসাথী শাখার অনুমতিও মিলেছে। এখন স্রেফ দাতার অপেক্ষা।
মমতার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মাধ্যমে বহু পরিবারের কর্ত্রী হাতে পেয়েছেন ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড। তাঁদেরই একজন প্রশান্তবাবুর স্ত্রী শ্রীলেখা চট্টোপাধ্যায়। ফেব্রুয়ারিতে তিনি ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড হাতে পান। তারপর তাঁর আবেদন অনুযায়ী স্বামী প্রশান্তবাবুর চিকিৎসা হচ্ছে ওই প্রকল্পের অধীনেই। হাওড়ার ওই হাসপাতালে বোন ম্যারো ইমপ্ল্যান্টেশনের খরচ পড়বে ১০ লক্ষ টাকা। পাঁচ লক্ষ টাকা মিলবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প থেকে। বাকি টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। উদ্যোগী হয়েছে হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালও।
শ্রীলেখাদেবী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা পাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আরও পাঁচ লক্ষ টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছি। স্বামী একসময় ব্যবসা করতেন। অসুস্থতার কারণে প্রায় ১০ বছর ধরে ঘরে বসে রয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে আরেকটু সহায়তা পেলে ভালো হয়।’ এ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘মানুষ যাতে নিখরচায় প্রয়োজনীয় অথচ খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা পেতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ঠিক এই উদ্দেশ্যেই করেছেন।’ মমতার সাধের এই প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরেই চালু রয়েছে হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতাল গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা আর ভেঙ্কটেশ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন আমরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি। এবার হাওড়া ইউনিটে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে। পাঁচ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পাওয়া যাবে। বাকিটা কোনওভাবে জোগাড় করা যায় কি না, দেখছি। দেশখ্যাত হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট ডঃ মাম্মন চন্ডী জানিয়েছেন, মাল্টিপল মায়লোমার মতো ব্লাড ক্যান্সারে অটোলোগাস বা রোগীর নিজের দেহের স্টেম সেল দিয়েই বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন হয়। প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি অত্যন্ত কম।