৪০০০ পরিযায়ী শ্রমিকের খিদে মেটাচ্ছে ‘রোটি ব্যাঙ্ক’
কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলতেই দেখা গেল, তিন জন দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘ভাইয়া চার রোটি হোগা? তাজি রোটি?’
ওঁদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক। এক জনের থেকে আর এক জনের দুই গজের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঘরে তাজা রোটি ছিল না৷ অক্ষমতা প্রকাশ করার পাশাপাশি এই ভাবে বিকেলে হঠাৎ লকডাউনে বাড়ি বয়ে এসে চারটি রোটি চাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হল। আগন্তুকদের এক জনের ঝটিতি জবাব, ‘আপ তো পত্রকার হো। চলিয়ে না হাম লোগোকে সাথ৷ নিজের চোখেই দেখবেন সব, কেন রুটি চাইছি৷’
নয়ডা এক্সটেনশনের আবাসনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একই ভাবে রুটি চাইছেন ওরা৷ কারও কাছ থেকে পাচ্ছেন আবার কারও কাছে পাচ্ছেন না৷ তবে এত টুকু ক্লান্তি নেই ওই চোখমুখগুলোয়। নয় নয় করে গোটা পঞ্চাশেক বাড়ি থেকে রুটি সংগ্রহ করার পরে রওনা দেওয়া একটি মিনি ট্রাকে চেপে। সেখানেও কিন্তু করোনা-সতর্কতায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং কঠোর ভাবে মেনে চলা হচ্ছে৷ মিনি ট্রাকের উইন্ডস্ক্রিনে সাঁটা নয়ডা প্রশাসনের বিশেষ অনুমতিপত্র৷
গন্তব্যস্থল নয়ডা সেক্টর ৭৮৷ একটি বহুতল আবাসনের মেন গেটের বাইরে দাঁড়াল মিনি ট্রাক। সেখানে ততক্ষণে আরও জনা তিরিশেক লোক হাজির, তাঁদের প্রত্যেকের মুখেও মাস্ক৷ ওঁরাও রুটি, থুড়ি তাজা রুটির সংগ্রাহক। সবার জোগাড় করা তাজা রুটি জড়ো করা হল তিন-চারটি বিরাট ঝুড়িতে৷ মোবাইলে কথা বলে এক জন সবাইকে বললেন, ‘পাঁচ মিনিট মে আ জায়েগা৷’
ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে এল উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের স্টিকার লাগানো আর একটি মিনি ট্রাক, তাতে তিন জন। তাঁরাই হাতে হাতে রুটির ঝুড়িগুলো তুলে নিলেন মিনি ট্রাকে৷ এ বার প্রশ্ন করলাম, এত রুটি কী হবে? এই সব কোথায় যাচ্ছে? কাদের জন্যই বা যাচ্ছে?’ পর পর প্রশ্ন শোনার পর হেসে উঠলেন ওঁরা৷ মাস্কও ঢাকতে পারল না হাসির দাপট। তার পর এক জন বললেন, ‘আমরা রোটি ব্যাঙ্ক চালু করেছি৷ লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিদিন তাজা রুটি সংগ্রহ করি, তারপরে তুলে দিই উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের হাতে৷ ওঁরা আমাদের সংগ্রহ করা রুটি নিয়ে চলে যান এখান থেকে একটু দূরে, সোরখা গ্রামে৷ সেখানে কমিউনিটি কিচেনে তৈরি হয় ডাল অথবা সব্দি৷ ওই রুটি-সবজি বা ডাল-রুটি দিয়েই রোজ চার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের পেট ভরানো হচ্ছে৷’
রোটি ব্যাঙ্কের উদ্যোক্তারা জানালেন, রোজ সন্ধ্যা ৭টায় শ্রমিকরা দল বেঁধে এসে এই রুটি-সব্জি খেয়ে যান, তবে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখেন৷ নয়ডার সেক্টর ৭৮-এর বাসিন্দা ও রোটি ব্যাঙ্কের অন্যতম কারিগর বা প্রতিষ্ঠাতা ব্রজেশ শর্মার কথায়, ‘এপ্রিলের গোড়ায় আমরা এই রোটি ব্যাঙ্ক শুরু করেছিলাম৷ এখনও পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার রুটি আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। প্রতিটি বাড়ি থেকে বিকেল ৫টা-সাড়ে ৫টার মধ্যে সর্বাধিক চারটি করে রুটি আমরা সংগ্রহ করি৷ রোজ দু’হাজারের বেশি রুটি সংগ্রহ করা হয়৷ শর্ত একটাই, তাজা হতে হবে এই রুটি৷’ ব্রজেশ বললেন, ‘আমরা নয়ডার বিভিন্ন আবাসনের সেই সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাদের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷’
ততক্ষণে স্টার্ট দিয়েছে মিনি ট্রাক। রোটি ব্যাঙ্কের রোটি নিয়ে যাত্রা শুরু করার পথে ওই গাড়ি। গন্তব্যস্থল সোরখা গ্রাম। যেখানে অপেক্ষায় থাকবেন কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। কয়েকটা রুটির জন্য।