রেশন পাচ্ছেন না সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিক
অন্ন চাই, প্রাণ চাই, মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই — আপাতত পরিযায়ী শ্রমিকদের চাহিদা এটুকুই। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকাররা রেশন দেওয়া হবে আশ্বাসও দিয়েছে, কিন্তু তা কি আদৌ পূরণ হচ্ছে? ‘দ্য হিন্দু’র করা সমীক্ষা দেখাচ্ছে , দেশের ৯৬ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকরাই রেশন পাচ্ছেন না। অন্তত যে সময়ের মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাতে উঠে এসেছে এই ছবিই।
লকডাউনের মাঝে দেশ জুড়ে মোট ১১ হাজার ১৫৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই শ্রমিকদের ৯৬ শতাংশই ৮ থেকে ১৩ এপ্রিল— এই পাঁচ দিন সরকারের কাছ থেকে কোনও রেশন পাননি। ২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ওই শ্রমিকদের ৯০ শতাংশের বেশি মজুরি পাননি মালিকপক্ষের কাছ থেকে। ফলে ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৭০ শতাংশের হাতে ছিল মাত্র ২০০ টাকা।
ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ১১ হাজারেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের কারও কাছেই পৌঁছয়নি রেশনের খাদ্যসামগ্রী। মহারাষ্ট্রেও ৯৯ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক রেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কর্নাটকে সেটা ৯৩ শতাংশ।
প্রশাসনিক আশ্বাস সত্ত্বেও দেশের ৭০ শতাংশ শ্রমিকই জানিয়েছেন, সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন— কারও কাছ থেকেই তৈরি করা খাবার জোটেনি তাঁদের। এ ক্ষেত্রেও উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের খারাপ অবস্থার কথা জানা গিয়েছে ওই সমীক্ষায়। ওই রাজ্যে সমীক্ষার আওতায় থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য তৈরি করা খাবারের বন্দোবস্ত করা ছিল না। কর্নাটকে ৮০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দশা হয়েছে। অন্য দিকে, দিল্লি এবং হরিয়ানায় ওই হার শতাংশের হিসাবে যথাক্রমে ৫৮ এবং ৬৬ শতাংশ।
দিন আনা দিন খাওয়া ওই শ্রমিকদের আর্থিক সঞ্চয়ের বেহাল দশাও ফুটে উঠেছে এই সমীক্ষায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে ২০০-রও কম টাকা রয়েছে, যাতে হয়তো দিন দুয়েক কাটানো যেতে পারে। গোটা দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রেও উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকেরা চরম দুর্দশায় রয়েছেন। ওই রাজ্যের ৮৭ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে রয়েছে ২০০ টাকারও কম। হরিয়ানায় আটকে পড়া শ্রমিকদের ৭৬ শতাংশের কাছে রয়েছে ৩০০ টাকারও কম।
এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা সরকারের তরফেও নিরাশ হয়েছেন। দেশ জুড়ে সমীক্ষা করা ওই শ্রমিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন, রেশন থেকে যা খাদ্যসামগ্রী পেয়েছিলেন, তাতে মাত্র দু’দিন চলে। এ ক্ষেত্রেও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের শোচনীয় অবস্থা। সমীক্ষার আওতায় থাকা শ্রমিকদের সকলেই একই দশা অর্থাৎ দু’দিনের রেশন রয়েছে তাঁদের কাছে। মহারাষ্ট্রের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে সমীক্ষার আওতায় থাকা ৯০ শতাংশেরও একই অবস্থা। অন্য দিকে, দিল্লি ও হরিয়ানার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ঠেকেছে ৮২ শতাংশে।