মেক ইন ইন্ডিয়া এখন সেল ইন ইন্ডিয়া, বিধানসভায় নাম না করে মোদীকে খোঁচা পার্থের
‘উনি বলেছিলেন দেশকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ করবেন, এখন করছেন ‘সেল ইন ইন্ডিয়া’। সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেচে দেওয়া হচ্ছে, তুলে দেওয়া হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া, শিপিং কর্পোরেশন, পবনহংস, বালকো, কোলইন্ডিয়া-আর কত বেচব রে ভাই, আর কত বেচব!’ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বাজেট নিয়ে জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ ভাষাতেই কটাক্ষ করলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শত ফারাক থাকতে পারে। আমাদের ঝগড়া থাকতে পারে। শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা করবেন না। আপনারাও তো চান, সোনার বাংলা গড়ে উঠুক। তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলুন, রাজ্যের যে প্রাপ্য তা মিটিয়ে দিক। আমরা বাংলার অর্থনীতির সুনাম রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
অসুস্থ অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্রের অনুপস্থিতিতে বুধবার ২০২১-২২ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করেছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাজেট বক্তৃতার উপরে শাসক-বিরোধী মিলিয়ে ১৫ জন বিধায়ক এদিন আলোচনায় অংশ নেন। বিজেপি’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন অশোক লাহিড়ি, শ্রীরূপা মিত্রচৌধুরি, শ্রীকৃষ্ণ কল্যাণী, অগ্নিমিত্রা পাল, নরহরি মাহাত, বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা এবং শঙ্কর ঘোষ। আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও আলোচনায় অংশ নেন। পার্থবাবু ছাড়াও তৃণমূলের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সমীর কুমার জানা, তাজমুল হোসেন, দীনেন রায়, অপূর্ব সরকার, মানিক ভট্টাচার্য, দেবব্রত মজুমদার এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী। প্রত্যেকেই রাজ্য সরকারের সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরেন।
বিভিন্ন তথ্য তুলে বিজেপি’র (BJP) বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ যে পিছিয়ে পড়েছে শ্রমিক, ছাত্র ছাত্রীদের বাইরে যাওয়া ও চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের ভেলোরে যাওয়া, সেটা প্রমাণ করছে। অবিলম্বে সিএজি রিপোর্ট ২০১৯-২০ পর্যন্ত অডিট করিয়ে বিধানসভায় পেশ করা হোক। জন কল্যাণমূলক প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা দিচ্ছে এবং কত জন পেয়েছেন, তার তালিকা প্রকাশ করা হোক। অশোকবাবুর অভিযোগ, জনগনকে এই বাজেটের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। আমার বিধানসভা কেন্দ্র বালুরঘাটে যেতে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়। রাজ্যে পরিকাঠামোর ঘাটতি আছে। ত্রাণ ও পরিত্রাণের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। শিল্পের জন্য এত কম বরাদ্দ কেন বলে প্রশ্ন তোলেন শ্রীরূপা মিত্রচৌধুরি। তিনি বলেন, বেকারত্ব ঘোচানোর ব্যাপারে রাজের কোনও উদ্যোগ নেই। স্থায়ী কর্মসংস্থানের কোনও পরিকল্পনা নেই বাজেটে।
জবাবি ভাষণে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও রাজ্য সরকার কোনও কর্মচারীর বেতন কমায়নি বা কর্মী সঙ্কোচনের পথে হাঁটেনি। এখানেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গির তফাত। কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন রাজ্য থেকে সমস্ত কর এবং শুল্কের টাকা তুলে নিয়ে গেলেও, রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ ঠিকমত না দিয়ে বঞ্চনা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার মাছের তেলে মাছ ভাজছে। এদিন অধিবেশন পর্বে মাঝেমধ্যেই নানা বিষয়ে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে ট্রেজারি বেঞ্চের বাকযুদ্ধ বাঁধে। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ইংরাজিতে বক্তৃতা করার সময় কিছু টিপ্পনি কাটায় অধিবেশন কক্ষ উত্তপ্র হয়ে উঠেছিল।