দিলীপ – শুভেন্দু – বাবুল – সৌমিত্র – বঙ্গ বিজেপিতে চতুর্মুখি কোন্দল?
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই দলবিরোধী একাধিক মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে একাধিক বিজেপি (BJP) নেতাকে। তৃণমূল থেকে আসা একাধিক নেতা অন্য সুরে কথা বলছেন। এদিকে সম্প্রতি বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) ও সৌমিত্র খাঁর (Saumitra Khan) পোস্ট ঘিরেও জলঘোলা শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে এবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) স্পষ্ট বার্তা।
তিনি বললেন, “পার্টির পক্ষ থেকে সব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। যাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের সমস্যা হচ্ছে, তাদের কিছু গন্ডগোল আছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম, লাগেনি। পার্টির স্বার্থর থেকে যখন ব্যক্তিগত স্বার্থ বড় হয় তখন সমস্যা তৈরি হয়। পার্টি যাদের উপর ভর করে এগিয়েছিল তারা আছে, সেভাবেই পার্টি এগোবে।”
দিনকয়েক আগে সৌমিত্র খাঁ ফেসবুক লাইভ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ও দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিরোধী দলনেতা নিজেকে জাহির করছেন। দিল্লিতে গিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন। বিরোধী দলনেতা আয়নার সামনে দাঁড়ান। আমি আমার বাবা-ভাইয়ের জন্য কিছু চাইনি।
দিলীপ ঘোষকেও খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, আমাদের রাজ্য সভাপতি অর্ধেক বোঝেন, অর্ধেক বোঝেন না।
এর পর আজ ফের ফেসবুক পোস্ট করেন সৌমিত্র। লেখেন, জল দুধের সাথে বন্ধুত্ব করল এবং নিজের স্বরূপ ত্যাগ করে দুধের সঙ্গে মিশে গেল। এই দেখে দুধ জলকে বলল, ‘তুমি যেভাবে শুধু বন্ধুত্বের কারণে নিজের স্বরূপ ত্যাগ করে আমার সাথে মিশে গেলে, আমিও আমাদের বন্ধুত্ব পালন করব, আজ থেকে তুমিও আমার দামেই বিক্রি হবে। তাই দুধকে যখন ফোটানো হয়, তখন জল বলে, এবার আমার বন্ধুত্ব পালন করার পালা, তাই তোমার থেকে আগে আমি মৃত্যু বরণ করব! তাই জল আগেই শেষ হয়ে যায়! যখন দুধ তার বন্ধু জলকে এভাবে মৃত্যু বরণ করতে দেখে, তখন দুধ উথলে উঠে আগুনকে নেভানোর চেষ্টা করে, কিন্তু যখন কিছু জলের ফোঁটা ছিটিয়ে তার বন্ধুকে উথলানো দুধের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়, তখন দুধ আবার শান্ত হয়ে যায়! কিন্তু ……এক ফোঁটা অম্ল সেই জল এবং দুধের নিবিড় বন্ধুত্বকে আলাদা করে দিতে পারে!
এদিকে মোদি-মন্ত্রিসভার রদবদলের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা জানান বাবুল সুপ্রিয়। তিনি লেখেন, পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল, এবং আমি তা করেছি।’ সঙ্গে হাসির ইমোজি দিয়ে জোড়েন ‘ধোঁয়া উঠলে কোথাও তো আগুন লেগেছে।’ অনুগত সৈনিকের মতো হাইকমান্ডের বার্তায় তিনি পদত্যাগ করলেও ব্যক্তিগতভাবে যে তিনি ব্যথিত সেই অনুভূতিও চেপে রাখেননি বাবুল । তিনি বলেন, ‘সমস্ত সহকর্মীর জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। সবার নাম আলাদা করে নিচ্ছি না। তবে বাংলা থেকে যাঁরা মন্ত্রী হতে চলেছেন তাঁদেরকে আলাদা করে অভিনন্দন। নিজের জন্য অবশ্যই মনখারাপ, তবে বাকিদের জন্য খুশি। এগিয়ে চলো।’
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে কটাক্ষ করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেন, “ওনাকে তাড়িয়ে দিলে ভাল হত ? ১২ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, কেউ এমন লেখেননি।”
দিলীপের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। আমি গুজব ওড়ার কথা বলেছি। নাড্ডাজি ফোন করে বলেন, আমাকে সংগঠনের কাজে লাগানো হবে। বাদ দেওয়ার কথা যিনি বলেছেন তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি।”
এদিকে দিলীপ আর শুভেন্দুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে অনেকদিন ধরেই। দিলীপের আদি বিজেপির বিজেপি নেতা কর্মীদের সরিয়ে শুভেন্দু নিজের লোকদের ঢোকাতে চাইছেন, এরকম অভিযোগ আগেই উঠেছে। আদি বিজেপিরা দলবদলু শুভেন্দুদের ‘তৎকাল’ বলে আখ্যা দেন।
সুতরাং মোদী-শাহ কাকে নিয়ে বাংলার ঘুটি সাজাতে চান, এটা আগামীদিনের দলীয় রদবদলই বলবে।