প্রতিশ্রুতি পালন করেননি বারলা, ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ারের মানুষ
সেতু, রাস্তা, কালভার্ট ও পরিস্রুত পানীয় জল। ভোটে জেতার পর কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখেননি কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জন বারলা (John Barla)। তিনি কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখতে না পারায় আলিপুরদুয়ারের ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী ব্লকগুলির সাধারণ বাসিন্দারা এখন রীতিমতো ফুঁসছেন। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, অথচ বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিএডিপি) ফান্ডে জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিমির মধ্যে এই তিনটি ব্লকে জন বারলার অনেক কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর কোনও প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি।
শুধু সাধারণ মানুষই নন। বিজেপির (BJP) প্রাক্তন জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পিছনেও অন্যতম কারণ, জন বারলার ওই প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারা। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রীর অবশ্য যুক্তি, করোনার জন্য এমপি ফান্ডে এখন কোনও অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। তাই জেলার সীমান্তবর্তী ওই তিনটি ব্লকে এই কাজগুলি করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে জেতার দু’মাস পরেই আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) এমপি জন বারলা জেলার ওই তিনটি ব্লকের আন্তর্জাতিক ভুটান সীমান্তে থাকা এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। তখন তিনি অবশ্য মন্ত্রী হননি। সেসময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তিনটি ব্লকে সীমান্তের ১০ কিমি এলাকার মধ্যে বিএডিপি ফান্ডে রাস্তা, চা বাগানগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প, সোলার বাতির ব্যবস্থা, কালভার্ট ও সেতু তৈরি করা হবে।
কিন্তু লোকসভা ভোটের দু’বছর পরেও তাঁর একটি প্রতিশ্রুতিও রাখতে না পারায় স্বাভাবিকভাবেই সীমান্তবর্তী ব্লকগুলির সাধারণ মানুষ এখন তাঁর বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে। আবার, বিধানসভা ভোটের আগে আলিপুরদুয়ারে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেলকে নিয়ে একটি ট্যুরিজম সেন্টার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জন বারলা সেই প্রতিশ্রুতিও রাখতে পারেননি।
তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, জন বারলা জেলার সীমান্তবর্তী ওই ব্লকগুলির বাসিন্দাদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি বলেই তো আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। এখন এমপি ফান্ডে টাকা নেই, এই যুক্তি সাধারণ মানুষ মানবে কেন? গঙ্গাপ্রসাদবাবুর প্রশ্ন, তাহলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিলাসবহুল বাড়ি ও চামুর্চিতে শপিংমল তৈরির অর্থ আসছে কোথা থেকে?
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তে থাকা ওই তিনটি ব্লকের ৬০টির মতো চা বাগান আছে। সীমান্তের ১০ কিমি এলাকার মধ্যে বিএডিপি ফান্ডে রাস্তাঘাট, পাকা সেতু, কালভার্ট, বাগানগুলিতে পানীয় জল ও সোলার বাতির প্রচুর কাজ করা যায়। ওই ব্লকগুলির চা শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘বারলা এখহন এলাকা মে নি দিশেলা।’ অর্থাৎ বারলাকে এখন এলাকায় দেখা যায় না। কালচিনির বাসিন্দা বীরেন্দ্র বড়া ছিলেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক। বীরেন্দ্রবাবু বলেন, সীমান্তবর্তী ওই ব্লকগুলির চা শ্রমিকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি জন বারলা রাখতে পারেননি বলেই তো তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। গঙ্গাপ্রসাদবাবুর মতো আমারও প্রশ্ন, এমপি ফান্ডে অর্থ নেই, তাহলে বারলার বাড়ি ও শপিংমল তৈরির অর্থ আসছে কোথা থেকে। বীরেন্দ্রবাবু বলেন, আগামী দিনে সাধারণ চা শ্রমিকরা এর জবাব চাইবে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী জন বারলা অবশ্য বলেন, লোকসভা ভোটের পর আমি বলেছিলাম, সীমান্তবর্তী ব্লকগুলিতে রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করব। কে কী বলছে জানি না। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এখন এমপি ফান্ডে কোনও অর্থ আসছে না। এমপি ফান্ডে টাকা এলেই সব কাজ হবে।