পরীক্ষার ফল নিয়ে তরজা, সৌরভকে তুলোধোনা করলেন দেবাংশু
‘লেগেছে লেগেছে আগুন…’
নেটপাড়ায় ফের আগুনে তরজা দেবাংশু ভট্টাচার্য বনাম সৌরভ পালোধীর। এবারের ইস্যু মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক। করোনা পরিস্থিতিতে এবারে দুই বোর্ড পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বিশেষ গাণিতিক পদ্ধতিতে হয়েছে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন। এই পরীক্ষা হওয়া আর না হওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। হাজারো মিম, বাদানুবাদ, উচিত-অনুচিতের ঝড়ের মাঝে নয়া সংযোজন পরীক্ষা নিয়ে তৃণমূলের যুব মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya) মত প্রকাশ করেন। বাম মনস্ক সৌরভ পালোধী এর পালটা ভিডিয়ো বার্তা আপলোড করতেই দু’ভাগ সোশ্যাল মিডিয়া। একপক্ষ টিম দেবাংশু, অপরপক্ষ টিম সৌরভ।
মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর একটি ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে পরীক্ষার্থীদের ‘মরাল বুস্টআপে’র সময় দেবাংশু বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের উপর কিচ্ছু ডিপেন্ড করে না।’ আর এই মন্তব্যের সঙ্গে নিজেকে ‘সহমত’ বলে দাবি করে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন নাট্যকর্মী সৌরভ পালোধী।
দেবাংশুর সঙ্গে সহমত সৌরভ! অবশ্যই নয়। আসলে কটাক্ষ করেই এমন মন্তব্য পরিচালকের। ভিডিয়োয় সৌরভের নিশানায় দেবাংশু ও শাসক দল। তাঁর মন্তব্য, ‘এই প্রথম আমি দেবাংশুর সঙ্গে সহমত। কারণ ও ঠিকই বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের উপর কিচ্ছু নির্ভর করে না। কারণ আপনি মাধ্যমিকে ভালো নম্বর পেলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করলেন। স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ভালো রেজাল্ট। কিন্তু ভালো রেজাল্ট করে কী করবেন SSC নিয়োগ নেই রাজ্যে চাকরি নেই।’ এখানেই শেষ সৌরভ দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গে সঙ্গে শাসক দলকেও কটাক্ষ করে বলেন, ‘তোমরা যারা আজ পাশ করলে ১৮ হলে যখন ভোট দেবে, মনে রেখো এই সেই সরকার যারা তোমাদের জীবনের প্রথম পরীক্ষাটা দিতে দেয়নি।’
সৌরভ পালোধী (Saurav Palodhi) -এর এই পোস্টের পর থেমে থাকেননি দেবাংশুও। সৌরভের ভিডিয়োর নীচে লম্বা চওড়া পোস্ট লিখে কমেন্টও করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে এই সময় ডিজিটালকে দেবাংশু বলেন, সিপিআইএম-এর স্বভাবই হল অর্ধসত্য প্রকাশ করা। আমার ভিডিয়ো থেকে একটা লাইন তুলেই চলল ট্রোলিং। আমি ওই কথাটা বলেছিলাম বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। কারণ এখন এত কেরিয়ার বিকল্প আছে, যে অনেক সময় দেখা যায় স্কুলে ভালো ফল না করা পড়ুয়াটি ভবিষ্যতে কোনও না কোনও ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।’ সৌরভ পালোধীর ভিডিয়োয় দেবাংশুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘নাটক করতে গিয়ে তোমার উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট লেগেছে কি? উচ্চ মাধ্যমিকে কি নাটক নিয়ে পড়াশুনা করেছিলে? তারপরেও নাটকে সফল হয়েছ।’ কথা প্রসঙ্গে সৌরভের সঙ্গে সঙ্গে নাম না করে দেবাংশু বিঁধেছেন কসবার বাম প্রার্থী শতরূপ ঘোষকেও। তৃণমূল যুব মুখপাত্র দেবাংশুর কটাক্ষ, ‘এই যে তুমি আর তোমার কসবাতুতো ভাই আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ভিডিয়ো বানাও আর দিব্যি রোজগার করো। ফেসবুক কি তোমাদের থেকে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট চেয়েছে।’
সৌরভ পালোধীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘দেবাংশু ঠিকই বলেছেন। নাটক করতে আমার থেকে কেউ মার্কশিট চায়নি কিন্তু আমরা তো সমাজের সংখ্যালঘু অংশ যারা মেনস্ট্রিম বা অ্যাকাডেমিক ফিল্ডে কিছু করছি না। আমি অনেককেই জানি যাদের উচ্চশিক্ষায় প্রভাব ফেলেছে উচ্চমাধ্যমিকের নম্বর। এমনকি আমার মতো যারা সিনেমা বানাচ্ছেন নাটক করছেন, তারা পুনে এফটিআই বা এনএসডি-তে অভিনয়, সিনেমা পড়াশুনা করতে গেলে তাদের কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট দেখাতে হবে। তাই আমাদের মতো গুটি কয়েকের উদাহরণ এভাবে ধরাটা অপ্রাসঙ্গিক।’
সৌরভ পালোধী ভিডিয়োয় দাবি করেছেন, ‘করোনার গ্রাফ যখন নিম্নমুখী, তখন কি একটু নিয়ম মেনে পরীক্ষা নেওয়া যেত না। শিক্ষকরা তো জানিয়েছেন, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারা কোন কোন নিয়ম চেয়েছিলেন। সেগুলো কি মানা যেত না। কেরালা যদি পারে বাংলা কেন নয়!’ এর জবাবে তৃণমূল যুব মুখপাত্র দেবাংশু বলেন, ‘কেরলের বাম সরকার পরীক্ষা নেওয়ার পর দৈনিক কৌভিড গ্রাফ ১২-১৩ হাজার আর বাংলায় ৭০০। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক দেয় অনুর্ধ্ব ১৮ বাচ্চারা যাদের টিকাকরণ হয়নি। বাংলাতেও পরীক্ষা হলে কেরালার মতো আরও ছড়িয়ে পড়ত সংক্রমণ। কোল ফাঁকা হত অনেকেরই। তখন আবার এরাই টিভি চ্যানেলে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলোধনা করতেন। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো জনগণের ভোটের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাবা-মা যদি সন্তানদের ভবিষ্যত ভেবে পরীক্ষা বাতিলের কথা ভাবেন, তাহলে সরকারের তো কিছু করার থাকে না। কেরালার মতো সিদ্ধান্ত হলে এখানেও একই ভয়ানক পরিস্থিতি হত। বাংলার মানুষ তা বোঝে বলেই সিপিআইএম-কে জিরো করে দিয়েছে।’
বাম-তৃণমূল পন্থী দুই নেতার তরজায় পক্ষ নির্বাচন করেছেন নেটিজেনরাও। কেউ দেবাংশু ভট্টাচার্যকে সমর্থন করে সৌরভ পালোধীকে ধুয়ে দিয়েছেন তো কেউ আবার সৌরভের পক্ষ ধরে তৃণমূলকে তোপ দেগেছেন। সব মিলিয়ে রেজাল্ট আউটের পর দুই নেতার তর্কবিতর্কে সরগরম নেটপাড়া।