কয়লা-লোহার কারবারে বিপথগামী মহিলাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে উদ্যোগী রাজ্য
‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। কিন্তু সেই রমণীরাই সকাল থেকে ঝুড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন কয়লা কাটতে। অনেকে কারখানার ফেলে দেওয়া আবর্জনা থেকে লোহা সংগ্রহে করছেন। কয়লা ও লোহার কারবারে বিপথগামী মহিলাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। বিকল্প উপার্জনের রাস্তা দেখাতে চলতি আর্থিক বছরেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৪৫ হাজার মহিলাকে নতুন করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আওতায় আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এমনকী অর্থের জোগান দিতে ১৭০ কোটি টাকা লোন দেওয়ারও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।
স্বনির্ভর দপ্তরের জেলা আধিকারিক পারমিতা মণ্ডল বলেন, সাড়ে চার হাজার নতুন গোষ্ঠী গড়ে জেলার ৪৫ হাজার মহিলাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। মাসের দু’সপ্তাহ বিশেষ ড্রাইভ দিয়ে মহিলাদের বুঝিয়ে স্বনির্ভর দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
খনি অঞ্চলের প্রখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের নানা উপন্যাসে উঠে এসেছে এই অঞ্চলের মানুষের কষ্টকর জীবন কাহিনি। খনি এলাকার বহু পুরুষই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জীবন কাটান। সংসার চালানোর ভার যায় মেয়েদের উপরই। অর্থের জোগাড় করতে কেউ যান কয়লা কাটতে, কেউ আবার আবর্জনার স্তূপ থেকে লোহা কুড়িয়ে আয়ের সংস্থান করেন। অর্থের অভাবে অনেককে দেহ ব্যবসাতেও নামতে হয়। এর জেরে বিস্তীর্ণ খনি এলাকার জীবনযাপন অত্যন্ত নিম্নমানের। এবার সেই জীবনশৈলীর পরিবর্তন ঘটাতে প্রশাসনের হাতিয়ার স্বনির্ভর দল।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় ৮ হাজারের কিছু বেশি স্বনির্ভর দল রয়েছে। যা অন্য জেলার তুলনায় যথেষ্ট কম। তা সত্ত্বেও গত আর্থিক বছরে স্বনির্ভর দপ্তরের মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা লোন পেয়েছে গোষ্ঠীর মহিলারা। শিল্পাঞ্চলের মেয়েদের মধ্যে বিকল্প উপার্জনের ঝোঁক দেখা গিয়েছে। তার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে খনি অঞ্চলে অবৈধ কয়লা কারবারে এখন অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে। তাই উপার্জনের নতুন রাস্তা খুঁজছেন শিল্পাঞ্চলের মহিলারা। তাই এই পরিস্থিতিকে ভালো কাজে লাগাতে মরিয়া প্রশাসনও।
তবে, জানুয়ারি মাসের মধ্যে ৪৫ হাজার মহিলাকে নতুন করে গোষ্ঠীভুক্ত করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তাই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই এগচ্ছেন জেলা আধিকারিকরা। মাসের প্রথম সপ্তাহে এলাকায় ঘুরে নতুন মহিলাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের গোষ্ঠীর সুবিধা বোঝানো হবে। সেখান থেকে উৎসাহিত মহিলাদের নিয়ে গোষ্ঠী গড়ে দেওয়া হবে। পরের সপ্তাহে অফিসিয়াল কাজ শেষ করা হবে। একইভাবে তৃতীয় সপ্তাহে ফিল্ডে কাজ করে চতুর্থ সপ্তাহে অফিসিয়াল কাজ করে লক্ষ্যামাত্রায় পৌঁছনোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বহু আগেই সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় খনির দুর্দশা তুলে ধরেছিলেন। দীর্ঘ বাম আমলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটনোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বরং বিভিন্ন সরকার প্রকল্প থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছে খনি এলাকার বাসিন্দারা। মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শুরু হতে চলেছে। তাই মেয়েদের হাতে সরাসরি টাকা আসবে। নতুন ভোরের অপেক্ষায় খনি অঞ্চলের দিনমজুর মেয়েরাও।