করোনা আবহেও আয়কর আদায় বৃদ্ধির হারে দেশের সেরা বাংলা
করোনার কঠিন সময়ের মধ্যেও আয়কর (income tax) আদায়ে উজ্জ্বল বাংলা। চলতি অর্থবর্ষের গোড়া থেকে, অর্থাৎ গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এরাজ্যে যতটা আয়কর আদায় হয়েছে, তা গত অর্থবর্ষের ওই সময়ের নিরিখে প্রায় তিনগুণ। গতবছর এপ্রিল-জুলাই পর্বে রাজ্যে আয়কর আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এবার ওই একই সময়ে তা হয়েছে ১০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১৯২.৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, আয়কর আদায়ের বৃদ্ধির হারের নিরিখে দেশের সেরা বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কয়েকটি রাজ্যে আয়কর আদায় অনেকটাই বেশি। কিন্তু গতবারের সঙ্গে তুল্যমূল্য হিসেব কষলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা যেভাবে এগিয়ে গিয়েছে, তার ধারের কাছে নেই কোনও রাজ্য।
গত অর্থবর্ষের গোড়ার দিকে দেশজুড়ে লকডাউন ছিল। জুন মাসে যখন অনলক পর্ব শুরু হয়, তারপরও দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ড ছন্দে ফেরেনি। তার প্রভাব পড়ে দেশের রাজস্ব আদায়ে। সর্বত্রই কমতে থাকে আয়কর আদায়। সেই তালিকায় ছিল পশ্চিমবঙ্গও। কর্পোরেট ট্যাক্স হোক, বা আমজনতার ব্যক্তিগত আয়কর—আশার আলো দেখা যায়নি কোথাও। গত অর্থবর্ষের শেষদিকে করোনার প্রভাব অনেকটা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। অর্থনীতি ছন্দে ফেরায় তার সুফল পায় দেশ। বাড়তে থাকে রাজস্ব। সেই তালিকায় ছিল আয়করও। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের গোড়ায় জোরালোভাবে আছড়ে পড়ে করোনা। দেশজুড়ে লকডাউন না-হলেও, নিয়ন্ত্রণ করা হয় স্বাভাবিক জনজীবন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও ইনকাম ট্যাক্স আদায়ে আশার আলো দেখেছে দেশ। বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও।
আয়কর দপ্তরের কর্তারা বলছেন, একধাক্কায় ১৯২.৫ শতাংশ কর বাড়ানো মোটেই ছোট বিষয় নয়। বাণিজ্য ভালো হলেই তা সম্ভব। যেহেতু কর আদায়ের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে কর্পোরেট সংস্থাগুলি, তাই তাদের লক্ষ্মীলাভ আশার আলো দেখাচ্ছে, বলছেন কর্তারা। বাংলার আয়কর বৃদ্ধির হার যেখানে এতটা, সেখানে বাকিদের অবস্থা কী? দেশে বরাবরই আয়কর আদায়ে শীর্ষে থাকে মুম্বই। সেখানে আয়কর আদায় বৃদ্ধির হার ১০৮.৩ শতাংশ। বেঙ্গালুরুতে ৫২.৩, দিল্লিতে ৯৮.২, হায়দরাবাদে ১১৮.৪, চেন্নাইয়ে ৯৫.৬, পুনেতে ১২৩.৪, আহমেদাবাদে ১২৫.২, চন্ডীগড়ে ৮৭.৬, কানপুরে ১০৫, ভোপালে ৯২.২, জয়পুরে ১০২.৯, ভুবনেশ্বরে ১০৯.৮, লখনউতে ৯৫.১, পাটনায় ৮৫.৪, কোচিতে ৬৫.৭, নাগপুরে ৮২.৩, গুয়াহাটিতে ৯.৪ শতাংশ। বেশিরভাগ রাজ্যের রাজধানী শহরগুলিতে আয়কর দপ্তরের মূল কার্যালয় থাকায়, সেই শহরের হিসেবই আসলে সেই রাজ্যের মোট আয়কর আদায়ের হিসেব, বলছেন দপ্তরের কর্তারা। মহারাষ্ট্র বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে করদাতার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সেখানে একাধিক শহরে কর আদায়ের হিসেব হয়। সেই কারণেই ওই রাজ্যগুলির যেসব শহরে কর আদায় হয়, তার যোগফলই সেই রাজ্যের মোট আয়কর। যেমন মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে মুম্বই, নাগপুর ও পুনের মোট কর আদায়ের যোগফলই সেই রাজ্যের মোট আয়কর। হিসেব বলছে, গতবছর এপ্রিল-জুলাই পর্বে দেশে মোট কর আদায় হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এবার ওই একই সময়ের নিরিখে তা হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ৯৭.৬ শতাংশ। এই হিসেব থেকেই পরিষ্কার, সর্বভারতীয় স্তরে বৃদ্ধির হারের চেয়ে ঢের এগিয়ে বাংলা।