সমালোচনা করলেই আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার নিদান দিচ্ছেন বিজেপি নেতা, মন্ত্রীরা
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি (Fuel Price Rise) থেকে শিশুকন্যার (Child Death) মৃত্যু কিংবা কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা—মোদি (Narendra Modi) সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই আফগানিস্তানে (Afghanistan) চলে যাওয়ার নিদান দিচ্ছেন বিজেপির (BJP) নেতা-মন্ত্রীরা। পাঠানভূমি তালিবানের দখলে যাওয়ার পর থেকে এভাবেই সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন তাঁরা। যা দেখেশুনে রীতিমতো বিস্মিত রাজনৈতিক মহল।
শুরুটা করেছিলেন হরিভূষণ ঠাকুর (Haribhushan Thakur)। তিনি বিহার বিজেপির দাপুটে নেতা। ক’দিন আগে এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর মন্তব্য—‘এখানে (দেশে) যাঁরা ডরাচ্ছেন, আতঙ্কে রয়েছেন, তাঁরা অনায়াসেই আফগানিস্তানে চলে যেতে পারেন। সেখানে স্বস্তা জ্বালানিও। না গেলে বোঝানো যাবে না, ভারতে বসবাসের গুরুত্ব কতখানি।’ ঠাকুরের সুরে শুক্রবারও যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা রামরতন পায়েল এবং মোদি মন্ত্রিসভার মহিলা সদস্য শোভা করন্দলাজে। দু’জনেই সরকার-সমালোচকদের আফগানে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন।
এদিন মধ্যপ্রদেশের কাতনি শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন রামরতন (Ramratan Payal)। তিনি কাতনি জেলা বিজেপির প্রভাবশালী নেতা। জ্বালানির লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন শুনেই জ্বলে ওঠেন। সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা বরং আফগানিস্তানে চলে যান। সেখানে পেট্রলের লিটার ৫০ টাকাতে বিকোচ্ছে। এত স্বস্তাতেও কেউ পাম্পে যাচ্ছেন না। আপনারা তালিবান রাজত্বে গিয়ে জ্বালানি ভরে আসতে পারেন। জানবেন, এখনও আমরা এখানে (ভারতে) নিরাপদ। ’ রামরতনের এমন মন্তব্যে হতভম্ব হয়ে যান সাংবাদিকরা। সেটা কোনওরকম সামলে তাঁরা ফের কোভিডের তৃতীয় ঢেউ রোখার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে কোভিড নিয়ন্ত্রণে মোদিজির ভূমিকা তো আপনাদের মতো নামজাদা সাংবাদিকদের জানা উচিত। তবে এটা বলতে পারি, দেশের মানুষ কোভিড-বিধি মেনে চলতে মোটেও সচেতন নয়।’
রামরতন কী নিজেও সচেতন? এদিন তাঁকে ঘিরে ছিলেন একঝাঁক দলীয়কর্মী। তাঁর মুখে কোনও মাস্ক ছিল না। কর্মীদের মুখও ছিল আলগা। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার শাসন নেই তাঁর পার্ষদদের মধ্যে। তবুও, তিনি বলে গিয়েছেন, ‘কোভিডের মোকাবিলায় মানুষ সচেতন না হলে কারও কিছু করার নেই। এই মহামারীর দুঃসময়ে মোদিজি তো ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছেন।’
সম্প্রতি একটি রিপোর্টে বলা হয়, দেশে পাঁচ বছর হওয়ার আগে ন’জন শিশুকন্যার মধ্যে একজন মারা যাচ্ছে বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনায়। সেই রিপোর্ট উল্লেখ করে মিম সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে এখন মোটেও নিরাপদ নয় মেয়েরা। অথচ, কেন্দ্র আফগানিস্তানের মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ এদিন মুম্বইয়ে আসাদউদ্দিনকে জবাব দিতে গিয়ে তাঁকে আফগানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শোভা করন্দলাজে। তাঁর কথায়, ‘এখানে এসব বলার চেয়ে ওয়াসির বরং উচিত হবে আফগানিস্তানে চলে যাওয়া। সেখানে গিয়ে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়াকে তিনি কর্তব্য বলে মনে করুন। নিজের সম্প্রদায়কে রক্ষা করুন।’