কলকাতা বনাম আফগানিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সাক্ষী থাকল শহরবাসী
বিশ্ব রাজনীতির জটিল আবর্তে আফগানিস্তানের ভবিষ্যতে কী লেখা আছে, তা সময়ই বলবে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে কি হারিয়ে যাবে কলকাতার (Kolkata) সঙ্গে আফগানিস্তানের (Afghanistan) বহু যুগের সম্পর্ক? যে সৌহার্দ্যের সুর ধ্বনিত হয় রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ থেকে মুজতবা আলির ‘দেশে-বিদেশে’র বর্ণনায়, তা কি তালিবানি শাসনে ধ্বংস হবে চিরতরে? এ শহরের আফগানরা বলছেন, না। তা হতে দেওয়া যায় না। বরং সেই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতেই তাঁরা আগ্রহী। রবিবার শহরে এক ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নিয়ে সেই বার্তাই দিতে চাইলেন প্রবাসী আফগানরা। কলকাতা বনাম আফগানিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সাক্ষী থাকল শহরবাসী। যে ম্যাচে (Match) জেতার উদ্দেশ্য তেমনভাবে কারও ছিল না। বরং ম্যাচ শেষে কোলাকুলি আর সৌহার্দ্য বিনিময়ই ছিল মূল লক্ষ্য। বল করছিলেন রাজদীপ নাথ। ব্যাট হাতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে গেলেন গুল খান। ম্যাচ জেতে কলকাতা। কিন্তু দিনের শেষে ট্রফি পেল দু’দলই। আসলে জিতে গেল কলকাতাবাসীর সঙ্গে আফগানদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের ইতিহাস।
রবিবার এরকমই এক অভিনব ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় স্টেশনপল্লির মাঠে। আয়োজক স্থানীয় তরুণ মহল ক্লাব। ম্যাচ শুরুর আগে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। উত্তোলন হয় ভারত ও আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা। ম্যাচ দেখতে উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া পাখতুন জগরা ই হিন্দের সভাপতি ইয়াসমিন নিগার খান, স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর মধুছন্দা দেব। সম্প্রীতি ও শান্তির প্রতীক শ্বেত কপোত উড়িয়ে ম্যাচ শুরু হয়। এমন ম্যাচ দেখতে স্থানীয় লোকজনও ভালো সংখ্যায় ভিড় জমিয়েছিলেন।
বর্তমানে আফগানিস্তান তালিবানের দখলে। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সরকার গড়তে পারে তারা। আফগানিস্তানে তালিবান শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকেই দোলাচলে রয়েছেন এ শহরের আফগানরা। নানা আশঙ্কা তাঁদের মনে ভিড় করছে। ইয়াসমিন নিগার খানের কথায়, এই ম্যাচ কোথাও একটা ভারত-আফগানিস্তানের ভলোবাসা বা ‘ভাইচারা’র প্রতীক। তালিবানদের প্রতি বার্তাও বটে। গোলা-বন্দুকের কবলে পড়ে আমাদের এমন সম্পর্ক নষ্ট হোক, তা আমরা কোনওভাবে চাই না। সেটা যেন ওরাও (তালিবান) মনে রাখে। কলকাতা টিমের খেলোয়াড় অনর্ঘ্য গঙ্গোপাধ্যায়, তারক সিং, রাহুল রায়রা বলেন, বহু আফগান দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার বাসিন্দা। আবহমান কাল থেকে তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। তালিবান ক্ষমতা দখল করার পর তাঁরা অনেকেই গুটিয়ে রয়েছেন নানা আশঙ্কায়। তাঁদের অভয় দিতেই এই সম্প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন। আশা করি, আমাদের এমন সম্পর্ক অন্ধকারে আলোর রেখা হয়ে পথ দেখাবে।