বিজেপির ভবানীপুরের প্রার্থীকে নিয়েও তুমুল ক্ষোভ দলের অন্দরে?
বিধানসভা ভোটের ভরাডুবি থেকেও শিক্ষা নিল না বিজেপি। ২০২১ ভোটে অবাঙালি কেন্দ্রীয় নেতাদের দাপাদাপিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। সেখানে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তুলে বাজিমাত করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে বাঙালি মুখ খুঁজে পেল না গেরুয়া পার্টি। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে এন্টালির পরাজিত বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় পার্টি। শুধু প্রার্থী নন, ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপির পক্ষে পর্যবেক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পেয়েছেন আরেক অবাঙালি। তিনি বারাকপুরের এমপি অর্জুন সিং। এই ঘটনায় বিজেপির নিচুতলায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার একাধিক পদাধিকারীর বক্তব্য, জেলার যোগ্য বাঙালি প্রার্থী ছিল। কেন এভাবে বাইরে থেকে অবাঙালি প্রার্থী ও পর্যবেক্ষক চাপিয়ে দেওয়া হল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
যদিও এই বাঙালি-অবাঙালি ত্বত্ত্বকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর ব্যাখ্যা, বিজেপি সর্বভারতীয় পার্টি। আমরা বাঙালি-অবাঙালি করি না। দিলীপবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, তৃণমূল কেন জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে অবাঙালিকে টিকিট দিয়ে জিতিয়ে আনল? এইসব কোনও বিষয়ই নয়। তাছাড়া ভবানীপুর কেন্দ্রের একটা বড় ভোটার অবাঙালি। তাই অবাঙালি প্রিয়াঙ্কা টেব্রিওয়াল বাঙালির পাশাপাশি ওই অংশের মানুষের সমর্থন পাবেন বলেও আশাবাদী দিলীপ ঘোষ। বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর প্রশ্ন, কে টেব্রিওয়াল? সমাজে ওঁনার কোনও অবদান আছে কি না, কেউ জানে না। ভবানীপুরের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন।
এদিকে, প্রার্থী ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ ঘিরে বিজেপির অন্দরে জোর দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, সম্প্রতি এক ঘরোয়া বৈঠকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, ভিন রাজ্য থেকে ভুরি ভুরি অবাঙালি বিজেপি নেতাকে ভোটের আগে বাংলায় এনে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
বাংলার সংস্কৃতি বুঝতে আমাদের ভুল হয়েছিল। কিন্তু ভবানীপুর উপনির্বাচনে সেই একই ধারা বজায় থাকায় ভিন্ন অঙ্ক খুঁজছেন দলের একাংশ। তাঁদের দাবি, বঙ্গ পার্টির ‘সেন্টিমেন্ট’কে পাত্তা দেয় না কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাই বিধানসভা ভোটের আগে ইচ্ছামতো ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবারও একই পথে হাঁটল দিল্লি। পাশাপাশি ভবানীপুর উপনির্বাচনের দিন যে ভাবে ঘোষিত হল, তা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে গেরুয়া শিবিরে।