মোদীর জন্মদিনে পোস্ট কার্ড মজুতের ফতোয়া না মানায় বরখাস্ত বাংলার তিন পোস্ট মাস্টার
পোস্টকার্ডের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ১৫ দিনের বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। হায়দরাবাদে একটি ছাপাখানা থেকে এসেছে তিন কোটি পোস্টকার্ড। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি হেড পোস্ট অফিসকে কার্যত ‘ফতোয়া’ দেওয়া হয়, ২৫ হাজার কার্ড মজুত রাখতেই হবে। কিন্তু, পোস্টকার্ডের চাহিদা কম। তাই অহেতুক মজুত রাখতে চাননি রাজ্যের তিন হেড পোস্ট অফিসের প্রধান। তাঁরা কম পোস্টকার্ড চেয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ তিন পোস্টমাস্টারকে সাসপেন্ড করল ডাক বিভাগ। বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ওই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল ডাক বিভাগ। নির্দেশ ছিল, প্রতিটি হেড পোস্ট অফিসকে ‘ফিলাটেলি ডিভিশনের’ কাছে ২৫ হাজার করে ওই পোস্টকার্ডের ‘ডিমান্ড’ জমা দিতে হবে। পাশাপাশি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত হেড পোস্ট অফিসগুলিতে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া পৃথক একটি ডাকবাক্স। কিন্তু তিনজন পোস্টমাস্টার ২৫ হাজারের কম ডিমান্ড পাঠান। এরপরই গত ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের পোস্টমাস্টার বিপ্লব ভট্টাচার্য, কল্যাণীর পোস্টমাস্টার প্রণতকুমার বাগ ও রানাঘাটের পোস্টমাস্টার তাপস ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করেন কলকাতা রিজিয়নের পোস্টমাস্টার জেনারেল নীরজকুমার।
দপ্তরের অন্যান্য পোস্টমাস্টাররা এই সিদ্ধান্ত মানতে না পারলেও শাস্তির ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। এমনকী, সাসপেন্ড হওয়া রানাঘাটের পোস্টমাস্টার তাপস ভট্টাচার্যও কিছু বলতে রাজি হননি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত পোস্টমাস্টার কমল রায় বলেন, ‘এনিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।’ ডাক বিভাগের নদীয়া সাউথ ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পুলক দাসও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
তবে ডাক বিভাগের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কোনও অনিয়ম বা আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হয়। শুধুমাত্র নির্দেশমতো পোস্টকার্ড না চাওয়ার জন্য তিন পোস্টমাস্টারকে সাসপেন্ড করা শুধু অন্যায় নয়, নজিরবিহীন। তাছাড়া কোন পোস্ট অফিস কত পোস্টকার্ড নেবে, সেটা চাহিদার উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জোর করে বিষয়টি পোস্টমাস্টারদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। তাঁদের আরও বক্তব্য, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করবার জন্য এই আয়োজন অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে এসব হয়নি। যদিও পৃথক ওই ডাকবাক্সে তিন-চারটির বেশি পোস্টকার্ড জমা পড়ছে না। কারণ, এনিয়ে বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেই তেমন উৎসাহ নেই।