রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

কাটোয়ার বনেদি বাড়িতে মা দুর্গাকে ভোগে ইলিশ, চিংড়ি, বাটা মাছ নিবেদন করা হয়

October 12, 2021 | 2 min read

দুর্গাকে নানা পদের ভোগ নিবেদন করার রেওয়াজ রয়েছে বিভিন্ন বনেদি বাড়ির পুজোয়। কাটোয়ার কয়েকটি জমিদার বাড়িতে দেবী দুর্গার ভোগে নিবেদন করা হয় মাছের নানা পদ। সেই সব পুজোয় ইলিশ, চিংড়ি, পুঁই শাকের নানা পদ দেবীকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করার রেওয়াজ চালু আছে। সেই সঙ্গে পংক্তি ভোজনেও চলে আমিষের পরিবেশন। 
কাটোয়ার গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোয় তালপাতার পুঁথি দেখেই মন্ত্রপাঠ করা হয়। পুজোয় দেবীকে দিতে হয় জোড়া ইলিশের ভোগ। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে। 

জানা গিয়েছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পুজো শুরু হয়। পরবর্তীকালে বংশধর না থাকার কারণে দৌহিত্র বংশধর গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার পুজোর দায়িত্ব নেয়। এদিকে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারেরও পরবর্তীকালে একই সমস্যা দেখা দেয়। তখন পরিবারের সদস্য তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর জীবদ্দশায় ক্ষুদিরাম মুখোপাধ্যায়কে কালনা থেকে নিয়ে এসে কাটোয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে পুজোর দায়িত্ব দেন। সেই থেকেই ক্ষুদিরামবাবুর বংশধরেরাই এই পুজো চালিয়ে আসছেন। আদপে মুখোপাধ্যায়রা এই পুজো চালিয়ে এলেও এই পুজো গঙ্গোপাধ্যায় বা গাঙ্গুলিবাড়ির পুজো নামেই পরিচিত।

এই পুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য নবমীর দিন দেবীকে জোড়া ইলিশের ভোগ দিতে হয়। আগে গঙ্গার টাটকা ইলিশ এনে ভোগ দেওয়া হতো। তবে এখন বাজার থেকে কিনেই ভোগ দেওয়া হয়। জানা যায়, কাটোয়ার জেলেপাড়ার একটি পরিবার ওই জোড়া ইলিশ জোগান দেন। তাঁরাও বংশ পরম্পরায় এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

কাটোয়া ১ ব্লকের করজগ্রাম পঞ্চায়েতের  বনগ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুঁই-চিংড়ি নামে খ্যাত। প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকেই এই চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর দিনগুলিতে পুঁই-চিংড়ি সহ একাধিক মাছ দিয়ে দেবীর ভোগ নিবেদন করা হয়। শোনা যায়, চট্টোপাধ্যায়দের আদি বাসস্থান বনগ্রামে ছিল না। কোনও এক কুমোর গিন্নির ভিক্ষা ছেলে হিসাবে দুকড়ি চট্টোপাধ্যায় বনগ্রামে বসতি স্থাপন করেন। কুমোরদের গৃহদেবী ছিলেন মা দুর্গা। তারপর কুমোর বংশ লোপ পায়। তখন চট্টোপাধ্যায়রাই এই পুজোর দায়িত্ব নেন। 

কাটোয়া শহরের সিদ্ধেশ্বরী তলায় বিশ্বাস বাড়িতে দেবী দুর্গার আরাধনা হয় ইলিশ, চিংড়ি ও বাটা মাছের ভোগ নৈবেদ্য দিয়ে। এই পুজো প্রথমে শুরু হয় কেতুগ্রামের বহরানের বাসিন্দা গোষ্ঠবিহারী দাস বিশ্বাসের হাত ধরেই। তারপর তিনি মারা যাবার পর তাঁর স্ত্রী হেমনলিনী দেবী তাঁর বাপের বাড়ি কাটোয়ার সিদ্ধেশ্বরীতলার বিশ্বাস বাড়িতে চলে এসে একটি বটগাছের নীচে দেবী সতীমার আরাধনা শুরু করেন। একদিন হেমনলিনী দেবী মৃত্যুশয্যায় সতীমার পুজোর ভার বউমাদের উপর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন কেউই তা নিতে রাজি না হওয়ায় সতীমা তাঁর বংশধরদের স্বপ্নাদেশ দেন বন্ধ হওয়া দুর্গাপুজো আবার চালু করার। তারপর থেকেই আবার শুরু হয় বিশ্বাস বাড়িতে দুর্গাপুজো। নিয়ম আছে মহালয়ার আগের দিন বাড়ির কোনও সদস্যই ঘুমাতে পারবেন না। আর মহালয়ার দিন থেকে দশমী পর্যন্ত যেকোনও মাছ আর নবমীর দিন ইলিশ, চিংড়ি ও বাটা মাছ দিতে হবে দেবীকে। তবে এরমধ্যে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত শুক্রবার পড়লে সেদিন দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়াটাই দস্তুর। কারণ বাড়িতে যেহেতু সতীমাও থাকেন তাই। 

পাশাপাশি কাটোয়া শহরের পুরনো আমলের পুজোগুলির মধ্যে হাঁড়ি মায়ের পুজো অন্যতম। এই পুজোয় মাকে নিবেদন করা হয় কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Durga Puja 2021

আরো দেখুন