নিয়মের কড়াকড়িতে জৌলুসহীন তারকাদের পুজো
পুজো হচ্ছে। কিন্তু কোথায় হচ্ছে অর্থাৎ ‘ভেনু’ কিছুতেই জানানো যাবে না! দুর্গাপুজোর ভেনু নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন লোখণ্ডওয়ালা দুর্গোৎসবের প্রাণপুরুষ তথা গায়ক অভিজিৎ। ব্যাপারখানা কী? করোনা অনুশাসনের ধাক্কায় আগেই বন্ধ হয়েছিল মহারাষ্ট্রের গণেশপুজো। এবার দুর্গাপুজোতেও জারি হয়েছে কড়া বিধিনিষেধ। আর সেজন্যই পুজোর দিনগুলোয় অবাঞ্ছিত ভিড় এড়াতে এই কৌশল নিয়েছেন বলিউডের এই বাঙালি গায়ক। তিনি যাঁদের আমন্ত্রণ জানাবেন, একমাত্র তাঁরাই শুধু জানতে পারবেন, এবারের পুজোর স্থান। শুধু লোখণ্ডওয়ালাই নয়, কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় জৌলুসহীন কাজল-রানি মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান অভিনেতা বিশ্বজিতের পুজোও।
মায়ানগরীর দুর্গাপুজো বলতেই আমআদমির চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেলেবদের মাতৃ আরাধনার ছবি। যেমন— সান্তাক্রুজের নর্থ বম্বে সর্বজনীন দুর্গোৎসব সকলের কাছে কাজল-রানির বাড়ির পুজো বলেই পরিচিত। আসলে এই পুজোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এই বলি-নায়িকাদের ঠাকুরদা শশধর মুখোপাধ্যায়। প্রতি বছরই জুহুর টিউলিপ স্টারে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বছর পুজোর স্থান বদলেছে বলে জানালেন রানি-কাজলের তুতো ভাই সম্রাট মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছিলেন, ‘দুর্গাপুজো নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের যে গাইডলাইন, তা মেনে কখনওই বড় পুজো করা সম্ভব নয়। প্রতিমার উচ্চতা কোনওমতে চার ফুটের বেশি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। আমরা অন্যান্য বছর শিবাজি পার্কের অমিত পালের কাছ থেকে প্রতিমা নিয়ে আসি। এ বছর আমাদের প্রতিমা আসবে চেম্বুরের এক শিল্পীর কাছ থেকে। পুজোর ভেনুও পরিবর্তন হয়েছে। জুহুর আজিভাসান হলে অনুষ্ঠিত হবে।’ পুজোর দিনগুলিতে মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুই সেলেব-কন্যা রানি, কাজলের দেখা মিললেও তাঁরা থাকবেন সাধারণের চোখের বাইরে। কারণ, সদস্য ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের বাইরে নর্থ বম্বের পুজোয় এবার কারও প্রবেশাধিকার থাকছে না। ৭৫তম বছরের পুজোয় ভোগ বিতরণ থেকে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ।
লোখণ্ডওয়ালা দুর্গোৎসব এবার আকারে-বহরে অনেকটাই ছোট। এই পুজোর ব্যাপারে গায়ক অভিজিৎ বলছিলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশ মেনে দুর্গামূর্তির আকার ছোট হচ্ছে। সীমিত সংখ্যক অভ্যাগতরাই এবার পুজোয় মজা করতে পারবেন। সংখ্যাটা একশো থেকে দেড়শোর মধ্যে থাকবে। তাঁদের জন্য ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থাও থাকছে। তবে, আমাদের পুজোয় যে গান-বাজনার ব্যবস্থা থাকে, সেগুলো এবার করা সম্ভব হবে না।’
জুহু স্টিম সর্বজনীন দুর্গাপুজোর নেপথ্য নায়ক একসময়ের হার্টথ্রব বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। গত বছর ঘটপুজো করলেও এবার প্রতিমা এনেই তাঁরা দেবীর আরাধনা করবেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ বলছিলেন, ‘পুজোর সব দায়িত্ব এখন আমার স্ত্রী ইরাই পালন করেন। আমরা তো বাড়ির সকলে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, এবার হয়তো পুজো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ইরা উদ্যোগ নিল, তাই সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে পুজো হচ্ছে।’ জুহু স্টিম পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে অভিনেতা হৃতিক রোশনের পরিবার। প্রতি বছর শিবাজি পার্ক থেকে প্রতিমা আনা হলেও এবার মূর্তি যাচ্ছে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে। পুরোহিতও যাচ্ছেন এ রাজ্য থেকে। তবে, লোকসংখ্যা কমাতে এবার ঢাকিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। পুজোর সময় ঢাক বাজবে রেকর্ডে।
অন্যান্য বছরের মতো খারের রামকৃষ্ণ মিশনে এবার দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুজো হচ্ছে ডোম্বিভ্যালির সৃজন সম্মেলনীরও। পুজো উদ্যোক্তা পার্থ দাস জানালেন, কাটা ফল ব্যবহার হবে না তাঁদের পুজোয়। আর দর্শনার্থীরা যাতে বাড়ি বসে পুজো দেখতে পারেন, তার জন্য সোশ্যাল সাইটে অনলাইন সম্প্রচার করা হবে।