‘বঙ্কিমদা! আপনাদের নাকখত দেওয়া উচিত’, কোচবিহার থেকে মোদীকে নিশানা মমতার

December 9, 2025 | 3 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:২৬: SIR আবহে জেলা সফর শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে সভা করেছেন মমতা। আজ রাজবংশী অধ্যুষিত কোচবিহার থেকে ফের একবার বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ তুললেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিজেপির মতো টাকা দিয়ে ভোট কিনি না। আমি ভালবাসা দিয়ে কিনি। তাই যা দেওয়ার ভোটের আগেই দিই।’’ তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, ‘‘ভোটের আগে উজলার নামে নাটক, চা বাগান খোলার নাটক, নতুন করে কিছু দেওয়ার নাটক? এ সব আমরা বরদাস্ত করি না। আমরা যা দেওয়ার আগেই দিই। আপনারা নির্বাচনের আগে বিহারে লোক দেখিয়ে কী করলেন?আগে করে দেখান। তারপরে আমার সঙ্গে লড়াই করতে আসবেন। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতাতে এলে সব শেষ হয়ে যাবে। গোটা বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্পে হয়ে যাবে।’’

কোচবিহারের সভা থেমে বামেদেরও নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর কথায়, ‘‘আমরা উন্নয়ন পাঁচালি তৈরি করছি। ক্ষমতায় আসার পর এক বছর আমাকে বামফ্রন্ট সরকারের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে সময় দিতে হয়েছে। তারপর মাত্র ১৩ বছর হাতে টাইম পেয়েছি।’’ ডিটেনশন ক্যাম্প প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে মমতার তোপ, ‘‘যতই চক্রান্ত করো বাংলায় এনআরসি হবে না। আমরা এনআরসি মানি না, মানব না। ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি কাউকে বিভেদ করতে দিই না। বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখব।’’

মোদীর ‘বঙ্কিমদা’ মন্তব্যে কার্যত একহাত নেন মমতা। লোকসভায় বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোচবিহারের সভা থেকে তা নিয়ে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বললেন বঙ্কিমদা। যেন মনে হচ্ছে শ্যামদা, হরিদা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যিনি জাতীয় গান রচনা করেছিলেন, তাঁকে এই টুকু সম্মান দিলে না! আপনাদের তো মাথা নিচু করে নাকখত দেওয়া উচিত জনগণের কাছে। তাতেও ক্ষমা হবে না। দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাসকে অসম্মান করেছেন।রাজা রামমোহন রায়কে বললেন তিনি দেশপ্রেমী নন। ক্ষুদিরাম বসুকে সন্ত্রাসবাদী বললেন। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙলেন।’’

SIR নিয়ে এদিন রাজ্যবাসীকে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এসআইআরে নাম তুলুন, নইলে রাষ্ট্রপতি শাসনের ছক।’’ কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘এসআইআর করো কিন্তু হাতে সময় নিয়ে করো। কিন্তু দু’মাসের মধ্যে নাম বাদ দিতে হবে? এত দিন বাংলা থেকে দেশের নাগরিক হওয়ার পর নতুন করে আবার প্রমাণ করতে হবে দেশের নাগরিক কি না? এর থেকে অসম্মান আর কি হতে পারে? চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেই রাজ্যে ভোট ঘোষণার ছক।’’

আগামী নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী মমতা জানান, ‘‘রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল। নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি কাউকে বিভেদ করতে দিই না। বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখব।’’

বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে এদিনও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘একশ দিনের কাজের টাকা দেওয়া চার বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। আবাস যোজনা বন্ধ। গ্রামীণ রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। মনে রাখবেন ২০১১ সালের পর থেকে একশ দিনের কাজে আমরা অনেক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। ভাল কাজ করা কি অপরাধ? আমাদের সাংসদেরা দিল্লিতে গিয়েছিলেন আন্দোলন করতে। কিন্তু সকলের নামে কেস দিয়েছে। আদালতের রায়ের পরেও কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি।’’

কেন্দ্রের চিঠি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘এই কাগজের কোনও ভ্যালু নেই। আমরা আবার ক্ষমতায় আসব। তোমাদের ভিক্ষা চাই না। তোমাদের ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজের পায়ে হাঁটতে পারি। ১০০ দিনের কাজ বাংলাই করবে, কেন্দ্রের ভিক্ষা চাই না। টাকা লুকিয়ে রেখেছে কেন্দ্র, ভোটের সময়ে বের করবে।এই ১৪ বছরে যা উন্নয়ন করেছি সারা পৃথিবীতে কোথাও হয়নি, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি।’’

‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ দাগিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল বীরভূমের বাসিন্দা সোনালি খাতুনদের। বাংলাদেশে বন্দি ছিলেন তাঁরা। দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়েছে মমতার সরকার। দিন কয়েক আগে সোনালি ও তাঁর নাবালক ছেলে মালদহের মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলায় ফিরেছেন। সোনালির স্বামী ও আরও তিনজন বাংলাদেশে রয়েছেন। যা নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহারের রাসমেলার মাঠের জনসভা থেকে মমতার হুঙ্কার, “সোনালিদের ছাড়িয়ে এনেছি। বাকি চারজনকেও ছাড়িয়ে আনব।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen