বর্ধমানের পদ্মশ্রী সঙ্ঘের পুজোর আয়োজনে উঠে এসেছে ‘শতে সত্য’
শিল্পী সমীর মালো বলেন, সত্যজিৎ রায় মানেই বাঙালির আবেগ। শততম জন্মবর্ষে এই পুজোর মণ্ডপে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছি আমরা

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সত্যজিৎ রায়। সেই সঙ্গে নাটক, সাহিত্য, চিত্রকলায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁরই শততম জন্মদিন চলতি বছরই পালন করেছে বাঙালি। এবার দুর্গাপুজোর মণ্ডপের থিমেও বাঙালির প্ৰিয় পরিচালকের ছোঁয়া। বর্ধমানের পদ্মশ্রী সঙ্ঘের পুজোর আয়োজনে এবার চমক। তাঁদের উৎসব ভাবনায় উঠে এসেছে ‘শতে সত্য’।১৯২১ সালের ২মে কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়। এবছরই তাঁর ১০০তম জন্মদিন উপলক্ষে আপামর বাঙালি তাঁকে তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে স্মরণ করেন। এবার বর্ধমানের ওই পুজোমণ্ডপে বাঙালির এই আইকনকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। মণ্ডপসজ্জায় উঠে আসছে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত কালজয়ী বিভিন্ন ছবির সেটের টুকরো টুকরো অংশ। কাঠ, পাটকাঠি, খবরের কাগজ, লোহা, সাইকেলের রিং ও ভাঙা যানবাহনের অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। সেখানে স্থান পাচ্ছে বিভিন্ন চরিত্রের মডেল ও ফটো। মণ্ডপের সামনে নাটের ওয়াশারের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে একটি বিশালকার সত্যজিৎ রায়ের মুখ। সেই মুখটি পুজো মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ বলেই দাবি শিল্পীর।
শিল্পী সমীর মালো বলেন, সত্যজিৎ রায় মানেই বাঙালির আবেগ। শততম জন্মবর্ষে এই পুজোর মণ্ডপে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছি আমরা। একটা শ্যুটিং স্টুডিওর ভিউ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে মণ্ডপজুড়ে। একেবারে সামনে নাটের ওয়াশার দিয়ে সত্যজিতের মুখ থাকবে। তার পাশাপাশি সাইকেলের রিং ও বিভিন্ন লোহার যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি মডেল তৈরি হচ্ছে। তবে এই মণ্ডপে পুরনো জমিদার বাড়ির এক চালের দেবী প্রতিমা শোভাবর্ধন করছে। সেটিও যেন সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের কোনও একটি দৃশ্যপট। যেখানে পৌরাণিক মতে দেবী দুর্গা পূজিত হচ্ছেন ও রাজবাড়ির যে দুর্গাপুজোর সাজ, সেই দালানকেই তুলে ধরা হয়েছে।অপরদিকে বাজেপ্রতাপপুরে কেদারনাথ মণ্ডপ দর্শকদের এবার অন্যতম প্রিয় স্থান হয়ে উঠতেই পারে। ট্রাফিক কলোনি বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির এবছরের থিমের পুজো নজর কাড়বে বলেই দাবি উদ্যোক্তাদের। বাঙালির একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্রকে নিজেদের পুজোর মণ্ডপে তুলে ধরছেন শিল্পীরা। হিমালয় পর্বতমালায় ৩৫৮৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কেদারনাথ মন্দিরের আদলেই ট্রাফিক কলোনি বারোয়ারি পুজোমণ্ডপ প্রস্তুত হয়েছে। কেদারনাথকে যেমন ঘিরে থাকে হিমালয়ের তুষারাবৃত শৃঙ্গ। এখানেও সেই একই রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা। দেবীপ্রতিমার রুদ্র মূর্তি মণ্ডপের সঙ্গে বেশ মানানসই। কৃষ্ণনগরের প্রতিমা মণ্ডপে বাড়তি শোভাবর্ধন করছে।
পুজো উদ্যোক্তা শেখ নুরুল আলম বলেন, বর্ধমানের বড় পুজোগুলির পাশাপাশি আমাদের এই পুজো এবার দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠবে। বাঙালিরা বরাবরই ভ্রমণপিপাসু। কিন্তু করোনার জেরে কেউ ঘরের বাইরে বেরতে পারেননি। তাই ঘরের কাছে এবার কেদারনাথ দর্শন করতে পারবেন তাঁরা।