টিকাকরণের সুফল, করোনায় বয়স্কদের মৃত্যু কমছে রাজ্যে

এখনও পর্যন্ত করোনা দমনের অন্যতম সেরা পথ টিকাকরণ। এই তথ্য তারই হাতেগরম প্রমাণ।

May 16, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

১৬ জানুয়ারি থেকে রাজ্যে টিকাকরণ শুরু হয়। ১ মার্চ থেকে শুরু হয় ষাটোর্ধ্বদের টিকাদান (vaccination)। তার অল্পদিনেই ব্যাপক সুফল পেতে শুরু করেছেন রাজ্যের বয়স্ক (৬০-এর বেশি) ও অতি বয়স্করা (৭৫ উর্ধ্ব)। তাঁদের অনেকেই এখন অনেকটা সুরক্ষিত। আক্রান্ত হলেও করোনার বিষ ছোবলে এই দুই বয়সসীমায় মৃত্যুহারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বুলেটিন থেকে।

স্বাস্থ্য বুলেটিনের শেষদিকে থাকে করোনার কারণে প্রাণহানির পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ। শিরোনাম হল, ‘ফ্যাটালিটি রেট ইন রেসপেকটিভ এজ ব্র্যাকেটস অ্যান্ড জেন্ডার’। এখানে ৬টি বয়সসীমার মানুষের উল্লেখ রয়েছে। ০-১৫ বছর, ১৬-৩০ বছর, ৩১-৪৫ বছর, ৪৬-৬০ বছর, ৬১-৭৫ বছর এবং ৭৫ উর্ধ্ব। করোনা-আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, বয়সের ভিত্তিতে তাঁদের ভাগ করা হয়েছে এখানে। টিকাকরণের জেরে এই পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে আশার আলো।

১ মার্চ ছিল বয়স্কদের টিকাকরণের প্রথম দিন। আর ওইদিন রাজ্যে ৬১-৭৫ বয়সসীমার মানুষজনের মধ্যে করোনায় মৃত্যুহার ছিল ৪.৯৭ শতাংশ। ৭৫ উর্ধ্ব জনসংখ্যায় কোভিড মৃত্যুহার ছিল ১১.৩২ শতাংশ। ঠিক এক মাস টিকাকরণ চলার পর ১ মে’র বুলেটিন থেকে কী তথ্য উঠে এল, দেখা যাক। দেখা গেল, ৬১-৭৫ বয়সসীমায় করোনা মৃত্যুহার সামান্য হলেও কমেছে। ১ মার্চ ছিল ৪.৯৭ শতাংশ। ১ এপ্রিল হল ৪.৮৯ শতাংশ। ৭৫ উর্ধ্ব অতিবয়স্কদের ক্ষেত্রেও তা কমল। ছিল ১১.৩২, হল ১১.১৪ শতাংশ।

বয়স্কদের টিকাদান দু’মাস পার করার পর ১ মে’র মৃত্যুহারে চমকপ্রদ পরিবর্তন দেখা গেল। ৬১-৭৫ বয়সসীমায় মৃত্যুহার আরও কমল। ৩.৯৪ শতাংশ। ৭৫ উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে আরও লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন দেখা গেল। ১ মার্চ মৃত্যুহার ছিল ১১.৩২। ১ মে হল ৯.২৯ শতাংশ!

অবাক হওয়ার আরও বাকি। সর্বশেষ (সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত) ১৪ মে’র বুলেটিনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬০-৭৫ বয়সে করোনায় মৃতুহার আরও কমল। হয়েছে ৩.৪৭ শতাংশ। ৭৫ উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে তা হয়েছে ৭.৯৮ শতাংশ। ফলে মার্চ থেকে শুরু হওয়া বয়স্কদের টিকাদানের মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই ষাটেোর্ধ্বদের মধ্যে করোনা মৃত্যু কমল ১.৫০ শতাংশ। ৭৫ উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য কম হল। ৩.৩৪ শতাংশ।

সূত্রের খবর, ১৩ই মে’র হিসেব ধরলে বাংলার ৮৯ লক্ষ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। দু’ডোজ পেয়েছেন ৩৬ লক্ষের বেশি। এঁদের সিংহভাগই বয়স্ক। আর তার সুফলও ভোগ করছেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্টের পরিসংখ্যান দেখার মতো। বয়স্ক আমেরিকানদের ৭০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ। তাই সেদেশে হাসপাতালে ভর্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বরং, সেখানে এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন মূলত কমবয়সিরা। এপ্রিলের শেষ অবধি ওই দেশে যে ৯.৫ কোটি আমেরিকান দু ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে টিকাকরণের পরেও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন মাত্র ১৩২ জন।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ দ্বৈপায়ন মজুমদার বলেন, পরিসংখ্যান সত্যিই কথা বলে। টিকাকরণের ফলে বয়স্ক রা‌জ্যবাসীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু ক্র঩মেই কমছে, এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহই নেই। ইনস্টিটিউট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক ডঃ অনির্বাণ মিত্র বলেন, এরপর আর কেউ কি বলবেন, টিকা নেব না? এখনও পর্যন্ত করোনা দমনের অন্যতম সেরা পথ টিকাকরণ। এই তথ্য তারই হাতেগরম প্রমাণ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen