নিজের জীবন বাজি রেখে ইউক্রেনে অন্যের প্রাণ রক্ষা করছেন বাঙালি চিকিৎসক
আক্রমণ করেছে রুশবাহিনী, একে একে ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেকেই, সেখানেই উলটপুরাণ।

যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনে আটকে থাকা স্বদেশীয়দের পথ দেখাচ্ছেন এক বঙ্গতনয়। আক্রমণ করেছে রুশবাহিনী, একে একে ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেকেই, সেখানেই উলটপুরাণ। ৩৭ বছর বয়সী এক বাঙালি ডাক্তার পালালেন না। মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তিনি লড়ে চলেছেন।

যুদ্ধের কারণে আটকে পড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করছেন তিনি, দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বাস, গাড়ির ব্যবস্থা করে পৌঁছে দিচ্ছেন সীমান্তে। ইউক্রেনে আটকে পড়া মানুষদের ত্রাতা মধুসূদনের নাম পৃথ্বীরাজ ঘোষ। গত দু’দশক যাবৎ এই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ইউক্রেনে থাকেন। বিগত কদিনে প্রায় ৫০-এরও বেশি বাঙালি এবং ৩৫০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রীদের কিভ থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছেন ডাক্তার ঘোষ। পড়ুয়াদের কাছে তিনি পরিচিত মুখ, বিদেশি পড়ুয়াদের জন্য ডাক্তার ঘোষ একটি সংস্থা চালান। পড়ুয়াদের ইউক্রেনে যোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় পেতে সাহায্য করে তার সংস্থাটি।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পৃথ্বীরাজ ডাল ও চাল মজুত করেছেন, বাঙ্কারে আশ্রয় নেওয়া পড়ুয়াদের খাওয়াচ্ছেন তিনি। নিজের ব্যক্তিগত পরিচিতি কাজে লাগিয়ে হয়ে প্রায় ২৫ টি বাসের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। বাসগুলো আটকে পড়া পড়ুয়াদের কিভ থেকে নিকটবর্তী সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। এক বেসরকারি সাংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডাক্তার ঘোষ জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, পরিবহন ব্যবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বাসের চালক পাওয়া যাচ্ছে না। বাসের চালকেরা প্রাণ ভয়ে শঙ্কিত!” তিনি আরও জানিয়েছেন, অসংখ্য পাড়ুয়া তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, অনেকেই ইতিমধ্যে ভারতে পৌঁছেও গিয়েছেন।

পড়ুয়াদের অভিভাবককেরা সকলেই পৃথ্বীরাজ বাবুর কাছে কৃতজ্ঞ। জনৈক ছাত্র পুষ্পকের মা জানিয়েছেন, ডাক্তার ঘোষের ব্যবস্থা করে দেওয়া বাসে করেই রোমানিয়া সীমান্ত অবধি পৌঁছেছে তার ছেলে এবং তার বন্ধুরা। এবার ভারতে আসার বিমান ধরার অপেক্ষা মাত্র। তাই তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডাক্তার বাবুকে। আরেক পড়ুয়ার বাবা প্রদীপ ঘোষও ডাক্তার বাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তার কথায়,”ডাক্তার ঘোষ মহৎ কাজ করছেন।”

অন্যদিকে ডাক্তার ঘোষ নিজে জানিয়েছে,”এখনও অনেক কিছু করা বাকি।” তিনি জানাচ্ছেন ইউক্রেনের অন্য রাজ্যে আটকে থাকা পড়ুয়াদের থেকেও তিনি ফোন পাচ্ছি। খারকিভ মেট্রো স্টেশনে আটকে থাকা পড়ুয়ারাও তাকে ফোন করছেন। তার কথায়,”অনেক কাজ করতে হবে। এই সংকটের সময় আমি পড়ুয়াদের বিপদের মুখে ছেড়ে দিতে পারব না।” নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন পৃথ্বীরাজ।