ভাদ্র সংক্রান্তি ও রান্না পুজো, বাংলার নিজের এক উৎসব
রান্না পুজোর পরের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোয় বাসি খাবারের মধ্যে পান্তা উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বকর্মা পুজো বাঙালির মনে দুর্গাপুজোর হিল্লোল তুলে দেয়। এ পুজো আসা মানেই দুগ্গা পুজো চলে আসা। যন্ত্রপাতি-সরঞ্জামের দোকানে, গ্যারেজে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিশ্বকর্মা পুজো হয়, সেই সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানো এসব নিয়েই বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু গ্রাম বাংলায় আজও বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে পালিত হয় রান্না পুজো। বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম একটি পার্বণ হল এই রান্না পুজো। ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া। মনসা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হল অরন্ধন উৎসব। রান্না ঘরের একদিকে ফণিমনসা বা শালুক গাছের ডাল সাজিয়ে বা মনসার ঘট সাজিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন প্রায় সারা রাত ধরে চলে রান্নাবান্না।
বাংলায় বছরে দুইবার অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। একটি হয়, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন অর্থাৎ শীতলষষ্ঠীর দিন। আরেকটি, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। অনেকেই এই উৎসবকে উনুন পুজো বা গৃহ দেবতার পুজো হিসেবে মনে করেন। এই দু-দিন বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই। সেই কারণেই আগের দিন রান্না করে রেখে পরের দিন বাসি খাওয়ার রীতি।

অঞ্চলভেদে এই উৎসবের মধ্যেও তারতম্যে দেখা যায়। দেবী বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজিত হন। রান্না পুজোয় দেবী মনসাকে মরশুমের নতুন শাক- সবজি, মাছ ইত্যাদি উৎসর্গ করা হয়। আবার অনেকেই দেবী মনসার প্রতিমা পুজো করেন। পঞ্চ সর্পের ফণাযুক্ত প্রতিমাও পূজিত হন কোথাও কোথাও। আবার ফণিমনসা গাছের ডাল রেখেও পুজো করা হয়।

রান্না পুজোর পরের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোয় বাসি খাবারের মধ্যে পান্তা উল্লেখযোগ্য। অনেক বাড়িতে আমিষ রান্না পুজো হয়, আবার কোথাও কোথাও এই পার্বণ একেবারেই নিরামিষ হয়। আমিষের মধ্যে ইলিশ, চিংড়ি মাছ অন্যতম। এছাড়াও ভিন্ন ধরণের মাছ তালিকায় রাখা হয়। নিরামিষ পদের মধ্যে থাকে রকমারি ভাজা, ছোলা-নারকেল দিয়ে কচু শাকসহ একাধিক শাক, পান্তা ভাত, মুগ ও খেসারির ডাল, গুড় দিয়ে চালতার চাটনি, তালের বড়া, মালপোয়া ইত্যাদি।
দেবীপক্ষের আগে রান্না পুজোই বাঙালিদের শেষ উৎসব। এরপরই মর্তে দেবী দুর্গার আগমন হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ এই পার্বণটির খুব একটা বেশি চল নেই বললেই চলে। শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল এবং শহরতলিতে বাড়িতে বাড়িতে এখনও এই পার্বণ পালিত হয়। তবে ভাদ্র সংক্রান্তিতে রান্না পুজো মূলত পশ্চিম বাংলার লোকেরা অর্থাৎ এদেশীয়রা পালন করেন।