ভোটের আগে এবার পান্তাভাতকে ‘স্বীকৃতি’ দেবে কেন্দ্র

গ্রামবাংলার ‘ব্রেকফাস্ট’ বলতে একদা বেশ জনপ্রিয় ছিল পান্তাভাত

February 21, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাঙালির খাওয়াদাওয়া বলতে কী বোঝায়? অন্য রাজ্য থেকে যাঁরা আসেন, তাঁরা শুধু বোঝেন বাংলার খাবার বলতে ভাত, মাছের ঝোল, রসগোল্লা আর মিষ্টি দই। কিন্তু বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যাঁদের অল্পবিস্তর পরিচয় রয়েছে, তাঁরা অন্তত জানেন, এর বাইরেও রয়েছে হরেক পদ। যা বাংলার একান্ত নিজস্ব। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে থাকা বাঙালির মেনু কার্ডও সত্যিই বৈচিত্রময়! সেইসব খাবারের জাত চেনাতে এবার আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ (Ek Bharat Shreshtha Bharat) প্রকল্পের আওতায় তুলে আনা হচ্ছে বাংলার চিরন্তনী পদকে। কোন কোন পদ সেই তালিকায় ঠাঁই পাবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব অবশ্য কেন্দ্র নিচ্ছে না। দায়িত্ব বর্তেছে বাংলার মানুষেরই উপর। তাঁরাই জানাচ্ছেন, বাঙালির হেঁশেলে কোন কোন খাবারের দাপট বেশি।

দেশের আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ২০১৫ সালে ‘এক ভারত শ্রেষ্ট ভারত’ নামে একটি প্রকল্প সামনে আনে কেন্দ্র। উদ্দেশ্য একটাই—সব রাজ্যের সঙ্গে সংস্কৃতির সেতুবন্ধন ও হেঁশেলে-হেঁশেলে আলাপ। তারই অংশ হিসেবে এবার আঞ্চলভিত্তিক খাওয়া-দাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে মোদি সরকার। সাধারণ মানুষের থেকে তারা জানতে চাইছে, কোন কোন খাবার কোন অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। আবেদনে সাড়া দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেওয়া তথ্য যাচাই করছে কেন্দ্র। তারপর সেই খাবার, তার রেসিপি ও পুষ্টিগুণ প্রকাশ করা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই উদ্যোগ। এখনও পর্যন্ত সেই তালিকায় বাংলার নিজস্ব পদ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ২৩টি খাবার। তার মধ্যে অন্যতম আলু পোস্ত, মটর ডালের বড়ার ঝাল, মাছের ঝাল, বেগুনের সিরাজি, গুড়ে তৈরি নারকেল নাড়ু, ধোকার ডালনা, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা, শুক্তো, পিঠে বা ছানার ডালনার মতো পদ।

গ্রামবাংলার ‘ব্রেকফাস্ট’ বলতে একদা বেশ জনপ্রিয় ছিল পান্তাভাত (Panta Vat)। বিশেষত গরমকালে দিনভর তরতাজা থাকতে সকালে পান্তাভাত খাওয়া আজও বহু পরিবারের রেওয়াজ। তাই বাঙালির পছন্দের পান্তাভাতকে এরাজ্যের খাদ্য তালিকায় ঠাঁই দিয়েছে কেন্দ্র।

কনগ্লোমারেশন অব বেঙ্গল হোটেল ওনার্স-এর সভাপতি তারাপদ ভৌমিক কেন্দ্রকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বাংলার খাদ্য তালিকায় পান্তাভাত রাখা হোক। তারাপদবাবু বলেন, ‘অভিন্ন বাংলায় একসময় প্রশ্নাতীত জনপ্রিয় ছিল এই খাবারের। বাংলাদেশে সেই ধারা সমানে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। পান্তাভাতে প্রাতরাশ সারে অসমের মানুষও।

তবে বাঙালি যেভাবে রাতভর ভিজিয়ে রাখা ভাতের সঙ্গে পেঁয়াজ, নুন ও সর্ষের তেল মেখে, তার সঙ্গে কাঁচালঙ্কা চটকে খায়, তার কোনও তুলনা নেই। তার সঙ্গে যদি মাছ বা অন্য কিছু ভাজা থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তাই বাঙালির সংস্কৃতি থেকে পান্তাভাতকে আলাদা করা যায় না।’ কেন্দ্র তাঁর দেওয়া প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে বলে খুশি তারাপাদবাবু। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিন রাজ্যে বেড়াতে যাই কি শুধুই সেখানকার প্রকৃতি বা সংস্কৃতি দেখার জন্য? যদি কোনও প্রদেশের আঞ্চলিক খাবারের স্বাদই অজানা রয়ে গেল, তাহলে বেড়ানোও অসম্পূর্ণ।’ সেই সঙ্গে তারাপদবাবু মনে করেন, আঞ্চলিক খাবারকে তুলে ধরলে শুধু যে পর্যটকের লাভ, তা নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিও গতি পাবে। তাই শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যগুলিরও উচিত তাদের আঞ্চলিক মেনুকে সবার সামনে তুলে ধরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen