চেতলা অগ্রণীর চলতি বছর মাতৃ আরাধনার থিম ‘অনুস্মরণ’

কোভিড এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যেই এসে গিয়েছে উৎসবের কাল।

October 10, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

‘তোমার পরশ নাহি আর,/ কিন্তু কী পরশমণি রেখে গেছো অন্তরে আমার,—’ কোভিডকালের দ্বিতীয় শারদোৎসবেও এই শোক এখনও যেন আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী। কত মানুষ, কত প্রিয়জনকে হারিয়েছি আমরা। নির্মম করোনা তাঁদের জীবনের যবনিকা টেনে দিলেও তাঁরা কিন্তু একেবারে হারিয়ে যাননি। আমাদের স্মৃতিপটে তাঁদের উপস্থিতি কোনওদিন মুছে যাবে না। এবারের দুর্গাপুজোয় সেই চেষ্টাতেই ব্রতী দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম খ্যাতনামা ক্লাব চেতলা অগ্রণী। হারিয়ে ফেলা প্রিয়জনদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে চলতি বছর তাদের মাতৃ আরাধনার থিম ‘অনুস্মরণ’। 

কোভিড এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যেই এসে গিয়েছে উৎসবের কাল। এই উৎসবে প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা ভোলা সম্ভব নয়। তাই এই আনন্দের ক’টা দিন সদ্য অতীত হওয়া মুখগুলির অনুস্মরণে কাটাতে চান দক্ষিণ কলকাতার এই পাড়ার বাসিন্দারা। আত্মার মৃত্যু নেই, সে অবিনশ্বর। তাই প্রিয়জনরাও আমাদের সঙ্গেই থেকে যান। তাই চেতলা অগ্রণী তাদের সেই উপলব্ধিকে রূপ দিয়েছে মণ্ডপে। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছে। এক কথায় যেন বড় এক ঠাকুর দালান। থিমের পরিকল্পনাকে রূপদান করেছেন শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মণ্ডপের চার ধারে রয়েছে অমরজ্যোতি। কোভিড বিধি মেনেই মঞ্চটি পুরো খোলামেলা। দূর থেকেই দেখা মিলছে প্রতিমার। মণ্ডপের ভিতরে একটি কাল্পনিক মন্দির তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের মুখে হাঁস এবং সিলিং জোড়া ঝাড়বাতি অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আলো লাগানো হয়েছে। সমস্ত মণ্ডপটি যেন এক স্মৃতি-তন্ময়তাকেই প্রকাশ করেছে। মহালয়ায় দিন মায়ের চক্ষুদান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই পুজো কলকাতার মুখ্য প্রশাসক তথা পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পুজো বলে পরিচিত। তিনি অবশ্য বলেন, আমি এখন নামেই সভাপতি, পুজোর সমস্ত কিছুই করে নতুন প্রজন্মের ছেলেরাই। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সরকারের কোভিড বিধি ‘ফলো’ করে তিনদিক খোলা মণ্ডপ করেছি। এবার কোনও দর্শনার্থী পুজো দেখার জন্য হতাশ বা নিরাশ হবেন না। সকলের ঘরে পৌঁছে যাবে চেতলা অগ্রণী। মোবাইলে বা কম্পিউটারে শুধু টাইপ করতে হবে, www.chetlaagraniclub.in। তাহলেই অনলাইনে দেখা যাবে আমাদের ক্লাবের পুজো এবং প্রতিমা। সেইসঙ্গে এবার আমরা অষ্টমীর ভোগ বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার মাধ্যমে ওই ভোগ পৌঁছে যাবে। তবে সেই সংস্থাকে দিতে হবে মাত্র ৩৫ টাকা।

ভিড় যাতে না হয়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্লাবের পক্ষ থেকে। রাস্তা দিয়েই যাওয়ার সময় চেতলা অগ্রণীর পুজো মণ্ডপ ও প্রতিমা দেখা যাবে। হাইকোর্টের রায়ের কথা মাথায় রেখে দর্শনার্থীদের মণ্ডপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে রাতভর এই মণ্ডপে থাকেন ববি হাকিম। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে পুজো করি। আগে কালীপুজো করতাম। পরে দুর্গাপুজো হয়। এবার ২৯তম বর্ষের পুজো। ছোটবেলা থেকেই এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছি। পুজো মণ্ডপে বসে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করতে খুব ভালো লাগে। করোনা তো মেলামেশার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা এনে দিয়েছে। কষ্টের মধ্যেও কিছুটা হলেও মানুষ যাতে আনন্দে থাকে, মা দুর্গার কাছে এই আমাদের প্রার্থনা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen