দুধিয়ার ত্রাণশিবিরে দুর্গতদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী, মিরিকে ১৫ দিনের মধ্যে অস্থায়ী সেতু নির্মাণের ঘোষণা

October 7, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৫৩: উত্তরবঙ্গে লাগাতার বৃষ্টির জেরে ধস ও বন্যা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। পাহাড়ি জনপদে সেতু ও রাস্তা ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মিরিকের দুধিয়ায় পৌঁছে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির পরিদর্শন করেন। দুর্গতদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেন, “যাঁদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেগুলি আমরা দেখে নেব।”

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দুধিয়ায় ১৫ দিনের মধ্যে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হবে, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। যদিও প্রশাসনের তরফে প্রথমে এক মাস সময় চাওয়া হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি, একটি স্থায়ী সেতু তৈরির কাজও শুরু হবে, যার জন্য সময় লাগবে প্রায় এক বছর। মমতা বলেন, “আগামী এক মাস পর্যন্ত এগুলো চালাতে হবে। শুধু মিরিক নয়, যে সব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সব জায়গায় এগুলো করতে হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলির দ্রুত সংস্কার করতে হবে। দার্জিলিং-মিরিক সংযোগকারী দুধিয়া ব্রিজের সংস্কার ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “মানুষের কষ্ট এক দিনও মেনে নেওয়া যায় না। তাই দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে।” এছাড়াও তিনি বলেন, “যে মানুষটা চলে গিয়েছেন, তাঁর জন্য কোনও প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। ঘর ভেঙে গেলে ঘর তৈরি করা যায়। জীবন চলে গেলে আর কিছুই করার থাকে না। মৃত্যু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। আপানারা যাঁরা পরিবারের লোকেদের হারিয়েছেন, এর জন্য আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। কিন্তু কারও মৃত্যুর পরেও তো কেউ না কেউ থেকে যান। তাঁদের দেখভাল করার জন্য কিছু (সাহায্যের) প্রয়োজন হয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক মাসের মধ্যে মৃতদের পরিবারের একজনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেব। শিক্ষাগত যোগ্যতা, উচ্চতার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। বিশেষ ছাড় রয়েছে। লিখতে-পড়তে পারলেই হয়ে যাবে।”

ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের জন্য এক মাসের জন্য কমিউনিটি কিচেন চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গতদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য প্রশাসনকে সবদিক নজরে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কাছে ২৩ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে- যার মধ্যে ১৮ জন মিরিক ও কালিম্পং অঞ্চলের, এবং ৫ জন নাগরাকাটার। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “টাকা জীবনের বিকল্প নয়। কিন্তু আমরা চাই, এই কঠিন সময়ে যেন কেউ মুখাপেক্ষী হয়ে না-থাকেন। তাই সরকারের তরফ থেকে এটুকু সহযোগিতা করা আমাদের সামাজিক কর্তব্য।”

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নেপাল এবং ভূটানেরও কিছু দেহ আমাদের এখানে এসেছে। সেটা আমরা মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলেছি সসম্মানে দেহগুলি শনাক্ত করে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে দেহগুলি তাদের সরকারের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য।”

মিরিককে ‘সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত পুনর্বাসন ও পরিকাঠামো নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যান্য ভেঙে যাওয়া সেতুগুলিও নতুন করে নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন মমতা। তিনি বলেন, “সকলকে আমি রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করব, বি কুল (শান্ত থাকো)। যখন কোনও খারাপ সময় আসে, তখন সেটিকে ঠান্ডা মাথায় সামাল দিতে হয়। রাগ করলে কোনও লাভ হয় না। কেউ কেউ তো উসকানি দেয়। কিন্তু আপনারা তাতে পা দেবেন না। যারা উসকানি দেয়, তারা কিছু করে না। কিছু দেয়ও না।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen